লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শতাধিক নিহত ও চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টার পর পর ওই বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে। কম্পন অনুভূত হয় ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও, সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন। বন্দরের এক বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয় আগুনের মাধ্যমে; বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার মেঘ কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্তূপ সরাতে এখনও কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় লেবাননে বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। সরকারিভাবে দেশটিতে তিন দিন শোক পালন করা হবে। এমন দুর্ঘটনায় আমরাও শোকাহত এবং নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী মনে করছে, বৈরুতে যে ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা হামলার ঘটনা। মার্কিন সেনা কর্মকর্তারাও মনে করছেন, বৈরুতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ট্রাম্প বলেছেন, সেখানে কোনো ধরনের বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, যে ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাতে বোমা বিস্ফোরণই মনে হচ্ছে। আমাদের কয়েকজন বিশিষ্ট সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বুঝতে পেরেছে সেখানে কী ঘটেছে। এটা কোনো ধরনের উৎপাদন সংক্রান্ত দুর্ঘটনা নয়। যদিও এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, বন্দরে একটি আতশবাজির গুদামে বিস্ফোরণ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। আর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে সংরক্ষণ করে রাখা দাহ্য পদার্থের কারণে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে, সেখান থেকেই এই বিস্ফোরণ হতে পারে। আর লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন, দুই হাজার সাতশ ৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছয় বছর ধরে একটি গুদামে অনিরাপদভাবে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট আউন বলেছেন, জরুরি তহবিলে একশ বিলিয়ন লিরা দেবে সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
বৈরুতের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি মারাত্মক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শী হলো বিশ্ব। আমাদের দেশেও কয়েক বার কেমিকেল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যার ক্ষত এখনও সেরে ওঠেনি। তাই রাসায়নিকের ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিয়ে রাষ্ট্রগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে এবং এ ধরণের ভয়াবহতা থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।