প্রাথমিক পর্যায়ে সৃজনশীল বই সরবরাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভালো উদ্যোগ এখন প্রশংসার বদলে বদনামের মুখে পড়েছে। দেশের সব স্কুলে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে ইতিহাস জানানোর জন্য সৃজনশীল বই পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে নামী প্রকাশনা ও লেখকদের বাদ দিয়ে কিছু অপরিচিত প্রকাশনী ও লেখকদের বই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বই কেনায় কোনো নিয়মই মানা হয়নি। বইয়ের ভাষা ছোটদের উপযোগী কিনা তাও বিবেচনায় আনা হয়নি। এমনকি বইয়ের দামও বিবেচনায় আনা হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রকাশনা শিল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রয়ের আওতায় আনা হয়েছে ৩০টির মতো বই। যার প্রতিটির ৬৫ হাজার কপি ক্রয় করা হবে। সে অনুযায়ী প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বই ক্রয় করা হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু কোনো দরপত্র বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সিঙ্গেল সোর্সের মাধ্যমে শিশুদের জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাছাইয়ের পর বই ক্রয়ের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বই কেনার ক্ষেত্রে অসততার তথ্য তুলে ধরে প্রক্রিয়াটি বাতিল চেয়ে ও নিয়মমাফিক ক্রয়ের আহ্বান জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। আর অভিযোগ উাার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফলে আপাতত বই ক্রয়ের প্রক্রিয়া আটকে গেছে। জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে না জানিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনকি মন্ত্রীর দপ্তরে যাতে বই ক্রয়ের ফাইল না যায় তেমন কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, শিশুদের জন্য কিনতে যাওয়া বইয়ের তালিকায় দেখা গেছে ভালো ও মানসম্পন্ন কিছু বইয়ের পাশাপাশি এমন বেশ কিছু প্রকাশনী ও বই রয়েছে যা পরিচিত নয়। তাছাড়া পরিচিত নন বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখকও। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির একটি করে বই তালিকায় যুক্ত রাখা হয়েছে। তবে বই বাছাই করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্র আহ্বান করা হলে নামি ও পরিচিত প্রকাশনীগুলো অংশ নিতে পারতো। তাতে ভালোমানের বই বাছাই করা সহজ হতো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জানান, প্রাথমিকের বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। এভাবে বই ক্রয় করলে প্রকৃত প্রকাশকরা বঞ্চিত হবে। পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে শিশু শিক্ষার্থীরাও।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, ভালোমানের বই বাছাই করা হয়নি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।