নাটোরের বড়াইগ্রামের গোপালপুর ইউনিয়নের আস্তিকপাড়া গ্রামে সরকারীভাবে কাটা একটি খালে অবৈধভাবে বাঁধ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই সহোদর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এতে আস্তিকপাড়া বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে প্রায় তিনশ’ বিঘা জমিতে রোপণ করা ধানের চারা ডুবে গেছে। এ ছাড়া পানির নীচে থাকায় আরো দুইশ’ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ সম্ভব হচ্ছে না। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা গত সোমবার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০ বছর আগে আস্তিকপাড়া বিলের পানি নিষ্কাশন করে পাশের কমলা নদীতে নিতে সরকারী ভাবে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হয়। এতে মুলাডুলি, রাজাপুর, গোপালপুর, রাওতা ও আস্তিকপাড়া গ্রামের কৃষকরা বিলের প্রায় পাঁচশ’ বিঘা জমিতে সারা বছর নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করতে পারতেন। কিন্তু গত ২০ দিন আগে আস্তিকপাড়া গ্রামের মৃত ছফির শেখের ছেলে ফরিদ শেখ ও নিজাম শেখ তাদের বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে খালের পানি আটকে দেন। ফলে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে প্রায় তিনশ’ বিঘা জমিতে রোপণ করা ধানের চারা ডুবে গেছে। এ ছাড়া আরো দুইশ’ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকায় কৃষকেরা আবাদ করতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদ শেখের বাড়ির সামনে বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। এতে বিলে রোপণ করা অধিকাংশ জমির ধানের চারা ডুবে গেছে। কিছু জমিতে চারার মাথা না ডুবলেও এভাবে পানি জমে থাকলে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। এ সময় বিল পাড়ে বসে থাকা ক্ষতিগ্রস্থরা কৃষক আস্তিকপাড়া গ্রামের চা বিক্রেতা রফিজউদ্দিন বলেন, আমি ধারদেনা করে দেড় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। চারার দাম, সার ও শ্রমিক খরচ বাবদ বিঘা প্রতি আমার ৭ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। কিন্তু খালে বাঁধ দেয়ায় আমার জমি ডুবে গেছে। এখন সারা বছর আমি কি খাবো?
রাজাপুর বাজার এলাকার বয়োবৃদ্ধ কৃষক আবুল কালাম আযাদ জানান, আমার মোটে দেড় বিঘা জমি। অনেক কষ্টে সে জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু সব ধান ডুবে গেছে। পানি নেমে যাবে এ আশায় সিরাজগঞ্জ থেকে বেশি দামে চারা কিনে এনে রেখেছি। কিন্তু বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চারাগুলোও শুকিয়েই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদ শেখ জানান, আমার বাড়ির সামনে খালের জমি আমার। এদিক দিয়ে আমি পানি নামতে দেবো না। এভাবে পানি আটকে রেখে সবার ক্ষতি হলেও তার কি লাভ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাভ ক্ষতি বুঝি না। আমি পানি যেতে দেবো না।
গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খান জানান, বিষয়টি আমি জানি, এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিষয়টির আশু সমাধান হওয়া দরকার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ জানান, এ ব্যাপারে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।