বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ-আমনের আবাদ। মাঠে থাকা আউশ ধানের অনেক জমি বন্যায় ডুবে গেছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে আমনের বীজতলা। আমনের চারা ও আউশ ৩ থেকে ৫ দিনের বেশি পানির নিচে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। এবার সারাদেশে আমন মৌসুমের জন্য ২ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তার মধ্যে ১ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। আর ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কিন্তু বন্যায় এ দুটি ফসলের উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মৌসুমের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৮টি জেলার ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমির ১৪টি ফসল আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে আউশ ও আমন ধানের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সবজি আবাদে মার খেয়েছে কৃষক। মৌসুমি ফল চাষেও ভালো দাম পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির রেশও কৃষক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরইমধ্যে বন্যার ধাক্কায় কৃষকরা বেসামাল হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, দেশের কৃষি উৎপাদনে দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই ধাপে বোনা আমন ধানের ৫৬ হাজার ৩৬২ হেক্টর ও রোপা আমন ধানের ৮ হাজার ৭৫৪ হেক্টর জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির আউশ ধান। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৯৩৮ হেক্টর জমির আউশ ও আমনের ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ৯ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে করা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের এ বন্যায় আউশ ও আমন ছাড়াও ২৬ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমির পাট, ১১ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি, ১ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমির ভুট্টা, ১ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির তিল, ১ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির আখসহ অন্যান্য ফসলের আবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথম পর্যায় বন্যায় রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল জেলায় ১১টি ফসলের প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অঙ্কে ওই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। আর মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার জন। তবে দ্বিতীয় ধাপের ৩৮টি জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা না হলেও ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত। এদিকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে আমনের চারা বিতরণ করা হবে। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কোনো এলাকায় যদি আমন চাষ সম্ভব না হয়, তাহলে ৫০ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকলাই বীজ ও সার দেয়া হবে। তাছাড়া যে এলাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে, সেখানে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী নাবিতে বপনযোগ্য বীজ সরবরাহ করা হবে।
অন্যদিকে বন্যায় কৃষকের ক্ষতি পোষাতে কৃষি কর্মকর্তাদের দ্রুত বন্যা প্লাবিত এলাকায় সরেজমিনে মাঠ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। বন্যার পানি নেমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পুনর্বাসন ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করা হবে।