চট্টগ্রামে অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর রমরমা বাণিজ্য চলছে। এমন ধরণের বাণিজ্য দীর্ঘদিন চলে আসছে। এতে রহস্যজনক কারণে এখনো নেওয়া হয়নি আইনগত কার্যকরী পদক্ষেপ। শুধু তাই নয়; এসকল অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর গ্যারেজের কোনো ট্রেড লাইসেন্সও নেই। গ্যারেজ গুলোতে চলছে মদ-জুয়ার আড্ডা। আবার সিটি মেয়রের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নকল লাইসেন্স তৈরী হচ্ছে দেদারছে। এই বাণিজ্য চালিয়ে কথিত শ্রমিক নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হচ্ছেন। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর কারণে এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এতে দেখার কেউ নেই।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরে রিক্সার লাইসেন্স আছে অন্তত ৭০হাজার। এরমধ্যে নবায়ন হয়েছে প্রায় ৬২হাজার। কিন্তু সড়কে রিক্সা চলছে দুই লক্ষেরও বেশি। ওদিকে ভ্যান গাড়ীর লাইসেন্স আছে অন্তত ১৮হাজার ২৬টি। এরমধ্যে ভ্যান গাড়ী চলছে ২লক্ষেরও বেশি। এই সকল অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর লাইসেন্স এবং গ্যারেজের কোনো ট্রেড লাইসেন্সও নেই। এসব গ্যারেজের কারণে রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর ট্রেড লাইসেন্সধারী প্রকৃত গ্যারেজ ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পরিবার নিয়ে দুর্দিন অতিবাহিত করছেন। আবার শহরের মুদি ও হার্ডওয়ার দোকান গুলোর মধ্যে শতকরা ২০টি ট্রেড লাইসেন্স আছে। বাকী ৮০ভাগ দোকানেরই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই বাণিজ্য চলছে। অভিযোগ উঠেছে- জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত কয়েকটি রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর শ্রমিক সংগঠনের নেতারা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নকল লাইসেন্স তৈরী করছেন। অন্তত ২০টি স্পটে এই নকল লাইসেন্স তৈরী করে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিরীহ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ী চালকেরা প্রতারিত হচ্ছেন। অপরদিকে মহামান্য হাইকোটের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও চট্টগ্রাম শহরে দেদারছে ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলছে। নেই কোনো পদক্ষেপ। গত বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ কর্তৃক দৈনিক আজাদীতে অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
কিন্তু সেই মোতাবেক শহরের কোথাও অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযান কারও চোখে পড়েনি। বৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর গ্যারেজের মালিকদের দাবি-অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ী গুলো দ্রুত জব্দ করা হোক। আর তা নাহলে লাইসেন্স নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন; তাদের লাইসেন্স নবায়ন ফি মওকুপ করা হোক। অবৈধ এসব গাড়ী পুলিশকে ম্যানেজ করে রাস্তায় চলছে। এটা নিয়ে রীতিমত ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে পুরো নগরীতেই। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন প্রদত্ত একটি একই নাম্বারের প্লেট জালিয়াতি করে ৪টি প্লেট তৈরী করে আলাদা আলাদা জায়গায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই প্লেট ব্যবসায় জড়িত চৌমুহনীর দুবাই হোটেলে বসে কাদের মজুমদারসহ অন্তত ১০জন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ীর গ্যারেজ গুলোতে রমরমা জুয়ার আসরও চলে। কোথাও কোথাও নারী নিয়ে ওই কথিত শ্রমিক নেতাদের আড্ডা চলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই ২০থেকে ৩০টি ভ্যান গাড়ীর মালিক হয়ে অবৈধ গ্যারেজ দিয়ে ব্যবসা করছেন। অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর চালকরা বেশির ভাগই কিশোর গ্যাংয়েরও সদস্য। অবৈধ রিক্সা আর ভ্যান গাড়ীর কারণে শহরে নিত্যদিনের যানজট এবং দুর্ঘটনাও চলছে। চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের (রেজি:২১০৩) সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমি সারা জীবন সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিকে ধিক্কার জানিয়েছি এখনো জানাই। আমরা যারা রিক্সা, ভ্যানগাড়ী এবং গ্যারেজের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছি তারা অবৈধ রিক্সার চালক-মালিকদের কাছে জিম্মী হয়ে আছি। অবৈধ রিক্সা, ভ্যান গাড়ী ও গ্যারেজের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় প্রয়োজনে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে থাকবো। নকল লাইসেন্স যে সমস্ত রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীতে ব্যবহার হচ্ছে তা আমি চিহিৃত করে দেবো। আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আমার এই মোবাইল নাম্বারে(০১৫৫৩-১৩৪৬৬৭) যোগাযোগ করার বিনীত অনুরোধ করছি। এই বিষয়ে আইনগত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাননীয় চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক, মাননীয় জেলা প্রশাসক ও মাননীয় ডিসি ট্রাফিক এর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
অপরদিকে সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের উদ্যোগে অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভা হালিশহরের সবুজবাগে সংগঠনের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ওই সভায় সংগঠনের সভাপতি ও জনেনেত্রী সৈনিক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মো. সেলিম সভাপতিত্ব করেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের ৪১ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শ্রমিকলীগ নেতা মহিউদ্দিন গাফফার, প্রদীপ কোম্পানী, ইউছুপ কোম্পানী, মো. সবুজ, মো. হান্নান, দিদার কোম্পানী, ওয়াহাব কোম্পানী, মালেক কোম্পানী, নবী হোসেন কোম্পানী, মহিউদ্দিন কোম্পানী, আবদুর রহিম কোম্পানী, আলাউদ্দিন কোম্পানী, মিন্টু কোম্পানী, ছালাউদ্দিন কোম্পানী, রফিক কোম্পানী, বাবলু কোম্পানী, আলী আজগর, নুরুল আলম ও মো. কাদের মিয়া প্রমুখ।