কোরবানী পশুর চামড়া নিয়ে এবার অনেকেই বিপাকে পড়ে। দাম না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলতে কিংবা নদীতে ছুঁড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখন কোরবানির পশুর লবণযুক্ত চামড়ার কদর বেড়েছে। মূলত কাঁচা ও ওয়েটব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়ায় ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা এখন প্রতিযোগিতা করে চামড়া কেনায় দরও বাড়ছে। রাজধানীর পোস্তার আড়ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তের অর্ধেকের বেশি চামড়া দুদিনে বিক্রি হয়ে গেছে। আমিনবাজার, টঙ্গী, সোনারগাঁসহ ঢাকার আশপাশের এলাকার চামড়াও বেশির ভাগ কেনাবেচা হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা ঢাকার বাইরের চামড়াও কেনা শুরু করেছে। যদিও ঈদের ৩ দিন কোরবানির পশুর চামড়ায় নির্ধারিত দর মেলেনি। গত বছরের মতো এবারও দর বিপর্যয়ের কারণে অনেক এলাকায় চামড়া নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া রাস্তায় ও নদীতে ফেলে দিয়েছে। কেউ কেউ মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। তবে যারা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছে, তারা এখন ভালো দাম পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, পোস্তার আড়তে ছোট-বড় সব চামড়া এক লটে বিক্রি হয়েছে। তাতে প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরই মধ্যে পোস্তার আড়তের অধিকাংশ চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে। ওয়েটব্লু করে রপ্তানির সুযোগ দেয়ায় অনেক ট্যানারি মালিক এখন চামড়া কিনে রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আড়তদার ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া রপ্তানির সক্ষমতা নেই। কারণ তাদের সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের যোগাযোগও নেই। শুধু ট্যানারি মালিকরা রপ্তানির এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে এখন প্রতিদিনই ট্রাকবোঝাই চামড়া ঢুকছে। চামড়া কিনতে এখন বেশ প্রতিযোগিতা চলছে। শুরুতে কম দামে কেনাবেচা হলেও এখন লবণযুক্ত চামড়া দ্বিগুণ-তিন গুণ দাম চাওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এবার চামড়ার দর বিপর্যয় ঠেকাতে ঈদুল আজহার আগে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। নানা সুবিধা দেয়া হলেও প্রাথমিক কেনাবেচায় দর বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি। সম্প্রতি ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে আড়তদাররা চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে ঢাকায় ন্যূনতম দর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৩৫ টাকা দাবি করে। আর ট্যানারি মালিকরা প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার ৪০ টাকা সর্বোচ্চ দর নেয়ার জন্য আড়তদারদের কাছে দাবি জানায়। উভয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বর্গফুটে গরুর চামড়া কেনাবেচায় সম্মত হয়েছে।
এদিকে চামড়া কেনাবেচা প্রসঙ্গে পোস্তার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান জানান, ট্যানারিগুলো এখন ব্যাপক চামড়া কিনছে। দু'দিনে পোস্তার আড়তের অর্ধেকের বেশি চামড়া বিক্রি হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে বাকি চামড়া বিক্রি হয়ে যাবে। এখন চামড়ার বেশ কদর আছে। ঢাকার আশপাশে ও ঢাকার বাইরের চামড়াও পুরোদমে কেনাবেচা চলছে। বিশেষ করে নাটোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ঈশ্বরদী, বগুড়া, ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু এলাকার চামড়ার মান ভালো। ওই চামড়া এখন ট্যানারিগুলো কিনছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বৈঠকে এই দরে চামড়া কেনাবেচার সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।