নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বুধবার নরসিংদী সার্কিট হাউজে দিন ব্যাপী তদন্ত করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী (যুগ্ম-সচিব, স্থানীয় সরকার)। এ সময় শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হারুনুর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ সরোয়ার ভূঞা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া, দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মেরাজুল হক, সাধারচর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মাছিহুল গণি স্বপন, মাছিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিস রিকাবদার, পুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার হাসান উল সানি এলিছ, চক্রধা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: বেনুজির আহমেদ, জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: নাদিম সরকার, বাঘাব ইউপি চেয়ারম্যান মো: তরুন মৃধা, যোশর ইউপি চেয়ারম্যান মো: রাসেল আহমেদ, আইয়ূবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মজিবুর রহমান সরকার, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য যথাক্রমে তাছলিমা খানম, বিলকিস রানী, আফিয়া বেগম, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আরম রাখিল, ইউএনও অফিসের কর্মচারী জাকির হোসেন এবং ১৬ জন ঠিকাদারসহ মোট ৩২ জনের বক্তব্য শুনেন তদন্ত কর্মকর্তা।
অভিযোগকারীরা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির শিবপুরে যোগদানের পর থেকে পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের আওতায় পরিষদের সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্বেও জনস্বার্থে কোন উন্নয়নমূলক কার্মকান্ড বাস্তবায়ন করেনি। বরং বিভিন্ন জটিলতা তৈরী করে উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ নির্দেশিকা না মেনে নিজের ইচ্ছেমত নিম্নমানের বাসগৃহ নির্মাণ ও অর্থ আত্মসাৎ। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে হাট বাজার হতে প্রাপ্ত ইজারালব্ধ আয় ও ব্যয়ের হিসাব উপজেলা পরিষদের সভায় অদ্যাবদি উপস্থিাপন করেননি। তিনি আইন, বিধিমালা ও নীতিমালার কোনো তুয়াক্কাই করেন না। হাট-বাজার সমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি এবং উহা হতে প্রাপ্ত আয় বন্টন সম্পর্কিত নীতিমালা অনুসরণ না করে গড়বাড়ী বাজার অস্থায়ী পশুরু হাট, সোনাকুড়া বাজার অস্থায়ী পশুর হাট, কামরাব বাজার অস্থায়ী পশুর হাট অনুমোদন প্রদান করে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের আওতায় বিশেষ বরাদ্দের টি.আর, কাবিখা ও অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি। তিনি শিবপুর পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনেও অবহেলা করেছেন। দাযিত্ব পালনে অবহেলা করায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রায় ৩২ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের টাকা তামাদি হয়ে যায়।
এছাড়াও শিবপুর উপজেলার ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে ইউএনও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, ১২ থেকে ১৫ ভাগ ঘুষ না দিলে ঠিকাদারী কাজের বিল ইউএনও আটকে রাখেন এবং উল্লিখিত ঘুষের টাকা পরিশোধের পর ঠিকাদারী বিল প্রদান করেন। তাছাড়া ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করার পরও বৎসরে একটি মাত্র টেন্ডার পান ঠিকাদাররা। তিনি একটি ইউএনও ও অপর দিকে পৌর প্রশাসক হিসেবে বাকী ৯০ভাগ কাজ গোপনে করে থাকেন। এতে ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ছাড়াও তিনি পৌর প্রশাসক হিসেবেও শিবপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও লেক প্রকল্পটি টেন্ডারবিহীনভাবে বাস্তবায়ন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরের বিভিন্ন ঘুষ বানিজ্য, অনৈতিক কাজকারবার ও দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: হারুনুর রশীদ খান তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উত্থাপন করেন।
এব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী (যুগ্ম-সচিব, স্থানীয় সরকার) সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।