দেশে কর্মরত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো লাইসেন্স নবায়ন না করলে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। সরকারের এমন কঠোর মনোভাবে সম্প্রতি ওসব প্রতিষ্ঠান এখন নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়ন পেতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গত এক মাসেই আড়াই হাজারের মতো আবেদন পড়েছে। সেবার বদলে মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিলেও তা নবায়ন করতে আগ্রহ দেখায় না। মূলত সরকারি সংস্থার নজরদারির অভাবেই ওসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর চিকিৎসা সেবার নামে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম ও দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫ হাজার ৪৩৬টি, চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৩৭৫, রাজশাহীতে ২ হাজার ৩৮০, খুলনায় ২ হাজার ১৫০, রংপুরে ১ হাজার ২৩৬, বরিশালে ৯৫৭, ময়মনসিংহে ৮৭০ ও সিলেটে ৮৩৯টি। তবে ওসব চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশ লাইসেন্সবিহীনভাবে পরিচালিত হতো। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওসব প্রতিষ্ঠান মালিকদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয়। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠান তাতে তেমন সাড়া দেয়নি। কিন্তু এখন সরকারের কঠোর অবস্থানে এক মাসে আড়াই হাজারের অধিক আবেদন পড়েছে। আর এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি আবেদন জমা পড়ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৮ সালের পর থেকে অনলাইনে হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিবন্ধন ও নবায়ন করতে হয়। সেখানে যেসব শর্ত দেয়া আছে, অনেক হাসপাতালই তা পূরণ করতে পারে না। কারণ তথ্যগুলো নির্দিষ্ট ফরমেটে পূরণ করতে হয়। কোনো তথ্য বাদ থাকলে সফটওয়্যার তা নেয় না। এমন অনেক কারিগরি জটিলতার কারণে অনেকে ফরমেট পূরণ করতে পারে না। সম্প্রতি টেস্ট না করেই নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে ঢাকার উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে প্রশাসনের ভয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই আবেদন করেছে।
সূত্র আরো জানায়, গত দুই বছরে নিবন্ধন ও লাইসেন্সের জন্য ১১ হাজার ১৭৮ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩৮৭টি হাসপাতাল। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জনবল সঙ্কটের কারণে সরেজমিন পরিদর্শনের অভাবে দেড় হাজারের অধিক হাসপাতালের নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া যথাযথ কাগজপত্র জমা ও বিভিন্ন শর্তপূরণ না করতে পারায় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান ঝুলে রয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান অবস্থা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বর্তমানে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে লাইসেন্সহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এমনকি সংগঠনের পক্ষ থেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, অ্যাসোসিয়েশনের যারা সদস্য, সবাই বৈধভাবে হাসপাতালের নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো দুই-এক বছর লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। প্রত্যাশা করা যায় বাকি সময়ের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানই আবেদন করবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সহীনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি প্রশাসনের মনিটরিং বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনলাইনে নিবন্ধন আবেদন বেড়েছে। ২৩ আগস্টের মধ্যে এ তথ্য জমা দিতে হবে। যারা এ তারিখের মধ্যে মজা দিতে না পারবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে সারা দেশের বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেয়া হবে।