বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর ও জেন্ডার এ- ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক মীর তামান্না ছিদ্দিকার শিক্ষাছুটির ছাড়পত্রের জন্য তাকে ডরমেটরি ছাড়ার নতুন শর্ত আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোপূর্বে কোন শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমন শর্ত আরোপ করা হয়নি বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন শর্তে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে বৈষম্যের শিকার হন আরেক নারী শিক্ষক। বিভাগীয় প্রধান পদে সবাইকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হলেও ওই নারী শিক্ষককে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। এমন নিয়োগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নারীর প্রতি অবিচার উল্লেখ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, বর্তমান প্রশাসন নিয়মের তোয়াক্কা না করে নারী শিক্ষকদের সঙ্গে বৈষম্য করছেন।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই অধ্যয়ন ছুটির জন্য আবেদন করেন মীর তামান্না ছিদ্দিকা। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অধ্যয়ন ছুটি কমিটি সভার সুপারিশ এবং পরবর্তী সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ০১ (এক) বছরের জন্য শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করা হয়। ছুটি মঞ্জুুরের যে অফিস আদেশ প্রদান করা হয়েছে সেখানে নয়টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নয়টি শর্তের মধ্যে ৬ (ছয়) নং শর্তে বলা হয়েছে- ‘আপনার নামে বরাদ্দকৃত ডরমেটরি ফ্লাট ছাড়পত্র নেয়ার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝাইয়া দিতে হইবে। এই শর্তটি শুধু ওই নারী শিক্ষকের জন্যই আরোপ করা হয়েছে। এর আগে যারা শিক্ষাছুটিতে গেছেন কিংবা এখনো শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এমন কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ডরমেটরিতে রয়েছেন এমন তিনজন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছে। তিনজন শিক্ষকই শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন পাশাপাশি তারা ডরমেটরিতেও অবস্থান করছেন। এছাড়াও এর আগে যারা ডরমেটরিতে থাকা অবস্থায় শিক্ষাছুটি ভোগ করেছেন তাদের কারো ক্ষেত্রেই এমন কোন শর্তই আরোপ করা হয়নি। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষক তামান্না সিদ্দিকা ৬নং শর্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অধ্যয়ন ছুটি কমিটির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বরাবর অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এ- ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মারুফা রহমান বলেন- যেহেতু এরকম কোন নিয়ম নেই যে, শিক্ষাছুটিতে গেলে ডরমেটরি ছাড়তে হবে, তাহলে এই নারী শিক্ষকের বেলায় কেন এমন শর্ত আরোপ করতে হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে? একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে যদি নারী হওয়ার জন্য এমন বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তাহলে কোথায় আমরা সমতার চর্চা করব। এটা স্পষ্টতই জেন্ডার বৈষম্য এবং নিন্দনীয়। যদি এখন থেকে নিয়ম আরোপ করা হয় যে, শিক্ষাছুটি নিলে ডরমেটরি ছাড়তে হবে, তাহলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বর্তমানে যারা শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন তাদের সকলের ক্ষেত্রেই ডরমেটরি ছাড়ার নিয়মটি প্রযোজ্য হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু কালাম মো: ফরিদ উল ইসলাম বলেন- আসলে বিষয়গুলো যথাযথভাবে নিয়ম মেনে বাস্তবায়ন করা উচিৎ। নিয়ম বহির্ভূত এমন কর্মকা- স্পষ্টত জেন্ডার বৈষম্য। নারীর প্রতি এমন বৈষম্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ সময় খেয়াল খুশিমত প্রশাসনিক কার্মকা- পরিচালনা বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূখপাত্র (মৌখিক) তাবিউর রহমান, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তারা কেউ রিসিভ করেনি।