করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে: কর্নেল (অব:)আবু ওসমান চৌধুরী (৮৫) মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহী..........রাজেউন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধকালিন সময়ে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন এবং শেষদিন পর্যন্ত সেক্টর কমা-ারস ফোরাম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ভাইসচেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে গত ৩০ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়। মরহুম আবু ওসমান চৌধুরী চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক। তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার স্মৃতিও লোপ পাচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবু ওসমান চৌধুরী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে মেজর হন।
১৯৬০ সালে কুমিল্লার মৌলভী পাড়ার মনসুর আহম্মেদের বড় মেয়ে নাজিয়া খানমের সঙ্গে আবু ওসমানের বিয়ে হয়। নাসিমা ওসমান ও ফাওজিয়া ওসমান তাদের দুই মেয়ে। একজন কানাডা প্রবাসী এবং অপরজন ঢাকাতেই থাকেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যখন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হয়, সেই খবর কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে বসেই সংবাদ পেয়ে যান। সে সময় তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে।
পরদিন সকালে তিনি কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছান এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে আবু ওসমান চৌধুরী এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মন্ত্রিপরিষদকে গার্ড অব অনার দেন।
তার স্ত্রী নাজিয়া খানমও সে সময় রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে খাবার ও পানীয়, টাকা পয়সা পৌঁছে দেওয়া এবং প্রয়োজনে ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করা, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাহারা দেওয়ার মতো কাজ করেছেন সাহসিকতার সঙ্গে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়, বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাক-ের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের সময় একদল সেনসদস্য আবু ওসমান চৌধুরীকে হত্যার জন্য তার গুলশানের বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে না থাকায় তিনি সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন তার স্ত্রী নাজিয়া খানম।
পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আবু ওসমান চৌধুরী। বর্তমানে তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।