রাজধানীতে প্রায় এক ডজনের বেশি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের শত শত মোটর সাইকেল চলাচল করছে। রাইড শেয়ারিংয়ের এসব চালকের বেশিরভাগই ট্র্যাফিক শৃঙ্খলা মানছে না। সিগন্যাল অমান্য, সড়কের বিভিন্ন ফাঁকফোকর এমনকি ফুটপাত দিয়ে তারা মোটর সাইকেল চালিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় হুট করে প্রাইভেট কিংবা বড় যানবাহনের সামনে চলে আসছে। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা যেমন ঘটে তেমনি আশঙ্কাও থাকে। তাদের এমন বেপরোয়া মনোভাবের কারণে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনি অন্যান্য গতিশীল যানবাহনের চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু হওয়ায় রাজধানীতে দিনে দিনে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীতে চলাচল করছে ৭ লাখের মতো। এ সংখ্যার সাথে যুক্ত হচ্ছে দিনে প্রায় আড়াইশ’র বেশি। মোটর বাইকের এই সংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ভবিষ্যতে রাজধানীরচিত্র কী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনার হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর রাজধানীতে ৬৯টি মোটর সাইকের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয় পঞ্চাশের অধিক। মোটর সাইকেলের এই বিশৃঙ্খলা এবং চালকদের বেপরোয়া চলাচল যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে এর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজধানীর তীব্র যানজটের কারণে অনেকে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্য রাইড শেয়ারিং করে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারিং যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে তা যদি এখন থেকেই সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে একসময় রিক্সার মতোই রাজধানী মোটর সাইকেলের রাজধানীতে পরিণত হবে। এখন যেমন রিক্সা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, একই ব্যাপার ঘটবে মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে। কাজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মোটর সাইকেলের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজধানীতে কত সংখ্যক মোটর সাইকেল চলবে তার একটি যথাযথ সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যমান মোটর সাইকেল চালকদের যথাযথ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। রাজধানীর বাইরে থেকে দেশের যেসব অঞ্চল থেকে মোটর সাইকেল প্রবেশ করেছে তা নিয়ন্ত্রণ এবং নতুন করে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের বাণিজ্যিকিকরণ এবং এর সম্প্রসারণ সীমাবদ্ধ করতে হবে। লাগামহীনভাবে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বন্ধ করতে হবে। যেসব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা কাদের রাইড শেয়ারিংয়ের অনুমোদন দিচ্ছে এবং চালকের শারিরীক ও মানসিক অবস্থা সুস্থ্য ও স্থিতিশীল কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করতে হবে।