করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলা, দীর্ঘ লকডাউনজনিত বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সামলানো, ভ্যাকসিন আহরণ ও প্রয়োগ, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা সর্বোপরি বাজেটের আর্থিক ঘাটতি মেটাতে এবার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের দ্বারস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, আগামী ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর বৃহৎ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। তবে এবার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীর কারণে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে অনলাইন তথা ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বাংলাদেশ থেকেও অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ সংযুক্ত হবে অনলাইনে। এই বৈঠক থেকেই করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কাছ থেকে বড় অঙ্কের সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ইতোমধ্যেই যথাক্রমে ১৪ বিলিয়ন এবং ৫০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে, যার কিছু পেয়েছে বাংলাদেশও। তা ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দরিদ্র ও দুর্বলদের রক্ষায় আগামী ১৫ মাসের মধ্য আরও ১৬০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে। এর জন্য সংস্থা দুটির হাতে এখন ২২৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে। এই তহবিল থেকেই বড় একটি অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করাই এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য, যা কিছুটা হলেও সহায়তা করবে জাতীয় বাজেট ঘাটতিসহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায়। উল্লেখ্য, চলতি বছরের বাজেটে বিদেশী সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হলেও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে। তবে পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলাদেশ বিদেশী ঋণ নির্ভরতা কমাতে অনেকাংশে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। নিজস্ব অর্থায়নে স্ব-উদ্যোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জনের পর আস্তে-ধীরে হলেও প্রতিবছর জাতীয় বাজেট ঘোষণাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নেও কমিয়ে আনা হচ্ছে বিদেশী ঋণ নির্ভরতা। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদহার কম হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিদেশী ঋণই এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ সাপেক্ষ। অন্যদিকে দেশীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে তা সরকারের পরিচালন ব্যয়সহ প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ মেটানো হলে একদিকে যেমন দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়, অন্যদিকে লভ্যাংশও অর্জিত হয়। অনেকটা এই চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে ‘সবরেন ওয়েলথ ফান্ড’ বা ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ভাল প্রস্তাব। কেননা, রিজার্ভের অর্থ অলস পড়ে থাকে। এ থেকে তিন চার মাসের আমদানি ব্যয় রেখে বাকিটা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা ব্যবহার করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। যাতে অপচয়-দুর্নীতি না হয় এবং লভ্যাংশ অর্জিত হয়। মোটকথা, তহবিলের অর্থ ফেরত আসতে হবে অবশ্যই। কেননা এটি জনগণের টাকা। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ ও অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে করোনাজনিত জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায়।