আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আজকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশ করা হলো।
আশাশুনি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দ হয়। ১৬৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলাম এসব বরাদ্দ ছাড়ের জন্য নানা ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষক তাদের থেকে কিভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার টাকা আদায় করে নিয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। এসব শিক্ষকরা জানান, রুটিন মেরামতের জন্য ১১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০হাজার টাকা করে ৪৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ৫৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, ওয়াশ ব্লক বাবদ ২২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, আম্ফান ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৪ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা এবং খেলনা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এসব টাকা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে হস্তান্তর বা কাজ না করে জুন মাসে বিল ভাউচার নিয়ে নেওয়া হয়। টাকা ব্যয় দেখিয়ে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে স্কুলের নামীয় একাউন্টে না দিয়ে শিক্ষা অফিসার নিজের একাউন্টে জমা রাখেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে বিল পাশ করানোর সময় একাউন্ট অফিসে ৮০ হাজার টাকা খরচ লাগবে বলে প্রধান শিক্ষকদের জানিয়ে আড়াই লক্ষাধিক টাকা অগ্রিম আদায় করা হয়। কয়েক জন শিক্ষকের উপর এই টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব অর্পন করা হলে তারাই এই টাকা উত্তোলন করে শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কি পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছে তার একটি হিসাবে (কয়েকটি বিদ্যালয়ের নাম উল্লেখসহ) দেওয়া হলো। যেমন বদরতলা স্কুল হতে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার বিপরীতে ৭৮০ টাকা, হাজীপুর স্কুল হতে ৫ লক্ষ ৪০ হাজারের জন্য ৩৮৪০ টাকা, বাউচাষ স্কুল হতে ৩ লক্ষ ১৮ হাজারের জন্য ২২৬০ টাকা, সরাপপুর স্কুল হতে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার+ টাকার জন্য ১১৮০ টাকা, বসুখালী স্কুল হতে ১ লক্ষ ১১০০০+ টাকার জন্য ৭৯০ টাকা, আশাশুনি মডেল স্কুল হতে ৪ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার জন্য ৩০০৫ টাকা, বড় দুর্গাপুর স্কুল হতে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকার জন্য ২০৮০ টাকা এভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আড়াই লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সূত্রে জানাগেছে। এদিকে স্লিপের টাকা বাবদ ৯০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা স্কুলের একাউন্টে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার যেসব স্কুলে কাজ চলছে সেসব স্কুল সহকারী শিক্ষা অফিসারবৃন্দ পরিদর্শন করে থাকেন। তারা স্কুল পরিদর্শন করে প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করার পর সাধারণত টাকা ছাড় করা হয়। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহকারী শিক্ষা অফিসারদের প্রত্যায়ন প্রাপ্তির পরও টাকা ছাড় না দিয়ে নিজে পরিদর্শন করেন। তিনি ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান নিজে পরিদর্শন করেছেন এবং কাজ সন্তোষজনক বলে ব্যক্ত করেছেন বল জানাযায়। কিন্তু সন্তোষ জনক হওয়ার পরও টাকা ছাড় দিচ্ছেন না, বা বিলম্ব ঘটিয়ে বিপত্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের চেক ছাড় করা হয়েছে। একাউন্টস অফিসের কথা বলে আড়াই লক্ষ টাকা আদায় করার পরও শিক্ষা অফিসারের সম্মানি বাবদ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান হতে ৫ হাজার টাকা করে উত্তোলনের অভিযোগও নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলামের মোবাইল (নং ০১৭১৬৭৭০৫৮০) এ বারবার রিং করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। গত (প্রথম) দিনের নিউজের সময় রিং করা হলে তিনি রিসিভ করে পরে বক্তব্য দেবেন বললেও আর কল ব্যাক করেননি।