ভোলাহাট উপজেলাধীন বারইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম,বিসৃঙ্খলা ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সভাপতি মনিরুল ইসলাম ডলার ও প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলামের দ্বন্দ্ব চরমে। সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে- বারইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক অনুমোদনের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে প্রথম সভা হতে ০২(দুই) বছর মেয়াদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু গত ২৬/০৬/২০২০ ইং তারিখ প্রথম সভা নং ০৩/ ২০২০ কোরাম সংকট ও সভাপতি মহোদয়ের অনুপন্থিতির জন্য সভা আরম্ভ করতে বিলম্ব হয়। ইতোমধ্যে সভাপতি মহোদয় আত্মীয়-স্বজনসহ অফিস কক্ষে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ,শারীরিক নির্যাতনসহ তান্ডবলিলা চালায়।এ কারণে প্রধান শিক্ষক বাদি হয়ে ভোলাহাট থানায় গত ১৪/০৭/২০২০ ইং তারিখে জিডি করেন যার নং ৪৩৬। জিডি সূত্রে জানা যায়, উচ্চবিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির বিশেষ সভা ও কোঅপ্ট সদস্য নির্বাচনের জন্য গত ২৬/০৬/২০২০ তারিখ নির্ধারণ করে সভাপতি মনিরুল ইসলাম ডলারকে নোটিশ করা হয়। কিন্তু তিনি নোটিশ গ্রহন না করে ব্যক্তিগত আক্রোশে সভায় উপস্থিত হন নায়। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বেলা ১১.২০ সময় প্রধান শিক্ষক বিধি সম্মতভাবে সভা চালাতে থাকেন। লোকমুখে সভাপতি সংবাদ পান। তৎক্ষনাত মৃত মোকবুল হোসেন এর ছেলে উজাল জামাল(৪৭),মৃত ময়েজউদ্দিন এর ছেলে আজহারুল ইসলামসহ আরো অনেককে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে সকলের সামনে তরিকুল ইসলামের পাঞ্জাবির কলার ধরে টানা হেঁচড়া শুরু করে এবং অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে ও ধাক্কা দিয়ে অফিসের টেবিলের কোণে ফেলে দেয়। সেই সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সকলে এদিক-সেদিক চলে যায় এবং সভাপতি চিৎকার করে প্রধান শিক্ষকের প্রাণ নাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করে ঘটনা স্থল হতে চলে যায়। সেই সময় সহকারি শিক্ষক(আইসিটি) মোফাজ্জল হক(৩৮),মৃত আবুল কাসেমের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম(৩৬) ও মৃত মাজেদ আলীর ছেলে রেজাউল করিম(৪৮) উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে সভাপতি সাহেব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সভা আহ্বানে প্রধান শিক্ষকের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। সভাপতির চাপে প্রধান শিক্ষক অসহায় হয়ে নোটিশ নং ০৪/২০২০ মোতাবেক পূনরায় ০৩/০৭/২০২০ ইং তারিখ সভা আহ্বান করলে সভাপতিসহ সকল সদস্যই অনুপস্থিত থাকেন। সভাপতি সাহেব দ্বিতীয় সভা ভঙ্গ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের নিকট আলাদা নোটিশ ও রেজুলেশন বহিসহ প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। এমনকি ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অন্যান্য লোকজন কে নিজের পক্ষে আনার জন্য অর্থের প্রলোভন দেন। এ কারণে প্রধান শিক্ষক বাদি হয়ে ভোলাহাট থানায় গত ১৪/০৭/২০২০ ইং তারিখে বাধ্য হয়ে জিডি করেন। তারপরেও সভাপতি সাহেব ক্ষ্যান্ত না হয়ে ১৮/০৭/২০২০ ইং তারিখ ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্যের সাথে আলাপ না করে কতিপয় জনসাধারণ নিয়ে স্কুল মাঠে সভা করেন। সেই সভায় ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য এবং বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন না। ওই সভায় সভাপতি সাহেব প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে অশালীন ও মর্যাদা হানীকর ভাষা প্রয়োগ করে বক্তব্য রাখেন। পূনরায় ২০/০৭/২০২০ ইং তারিখ সভাপতি সাহেব সভার আহ্বান করলে ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য, বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কর্মচারী ও সাধারণ জনতা তার ডাকে সাড়া দেননি। তারপরেও তিনি বিধি বহির্ভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষককে ২০/০৭/২০২০ ইং তারিখে স্বারক নং ০২/০১ বাঃ উঃ বিঃ ২০২০ পত্র দ্বারা প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত, মোঃ উজাল জামালকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের আদেশ জারীসহ শিক্ষা ও প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল অধিদপ্তর ও দপ্তরে পত্র প্রেরণ করতে থাকেন। সভাপতি সাহেবের বিধি বহির্ভূত আচরণ, সেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপণার দিক লক্ষ্য করে এলাকার সুুধি সমাজ, অভিভাবক, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে দারুন উত্তেজনা বিরাজ করে। এহেন পরিস্থিতিতে ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য অত্র কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নিজ নিজ পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন। পদত্যাগকারি সদস্যরা হলেন- অভিভাবক সদস্য হুমায়ন, আনোয়ারুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম,শিক্ষক সদস্য আবদুল বারি,মোফাজ্জল হক, সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য সুলতানা রাজিয়া এবং গত ২৯/০৭/২০২০ ইং তারিখে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে প্রধান শিক্ষক মহোদয় এডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়্যারম্যান বরাবরে একটা আবেদন দাখিল করেন। এছাড়াও দ্রুত কমিটি গঠন ও প্রশাসনিক কাজ এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত করার লক্ষ্যে গত ২৬/০৮/২০২০ ইং তারিখে এডহক কমিটি গঠনের অনুমতি চেয়ে স্বারক নং বাঃ উঃ বিঃ ২৪/০১/২০২০ এবং ০৩/বা:উ:বি- ২০ তারিখ ২০/০৭/২০২০ ইং; ০৬/বা:উ:বি-২০, তারিখ ২৫/০৭/২০২০ ইং; ০৮(০৮)বা:উ:বি-২০ তারিখ ১২/০৮/২০২০ ইং; মা:উ:অ নং- ওএম/১৮৮-সম/১০০১/১০২ সুত্র উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবরে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত আবেদন দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, গত ২০/০৭/২০২০ ইং তারিখে বিধি বহির্ভূত ভাবে সভাপতি স্বাক্ষরিত একটি পত্র কারণ দর্শানো ও পদত্যাগ করার জন্য এবং ২৫/০৭/২০২০স ইং তারিখ বিদ্যালয়ের তালা চাবি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবরে আরেকটি পত্র পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়- গত ২৬/০২/২০২০ ইং অনলাইনে প্রকাশিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি-সদস্য পদে পরপর দুই বারের বেশী থাকতে পারবেন না এমন নীতিমালার পক্ষে রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হাইকোর্ট অভিমত দিয়েছেন। কিন্তু সভাপতি মুনিরুল ইসলাম ডলার প্রায় ১১ বছর উল্লিখিত বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে থেকেছেন এই নিয়ে জনতার মনে নানামূখী প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বারইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি মুনিরুল ইসলাম ডলারের সাথে ০১৭১৫৬৭৩৬৯১ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ভোলাহাট উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভোলাহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এটার নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। কাউকে মারা, লাঞ্চিত বা গায়ে হাত দেয়া উচিত নয়। তদন্ত সাপেক্ষে ম্যানেজিং কমিটি আইনি প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে নিয়ে এডহক কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার কি ব্যবস্থা নেন দেখা যাক। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহন আবশ্যক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালিক(ভারপ্রাপ্ত) এর সাথে ০১৭৩১২৩৮২৪৫ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনাটা আমি শুনেছি। সভাপতি স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও পেয়েছি, যতদুর জানি পরে সমাধান নাকি হয়ে গেছে বর্তমান অবস্থা উভয় পক্ষের কাছে শুনে সমাধান করতে হবে। বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখব। এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান- আমি সদ্য ভোলাহাটে যোগদান করেছি, আমি কিছু জানিনা। কোন চিঠি অফিসিয়ালি থাকলে খতিয়া দেখে আমার দৃষ্টিগোচর হলে বা নতুন করে কেউ দরখাস্ত দিলে ব্যবস্থা নেব। উল্লিখিত বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ চেয়্যারম্যান রাব্বুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও সভাপতি মনিরুল ইসলাম ডলারের মধ্যকার বিবাদ বা দ্বন্দ্ব ভোলাহাট উপজেলা সেরিকালচারের অফিস কক্ষে বসে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়্যারম্যান মোকবুল হোসেনের মধ্যস্থতায় নিরসন করা হয়েছে। যদি পরে কোন সমস্যা দেখা দেয় তবে উভয় পক্ষকে নিয়ে সামাধান করা হবে।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ,ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির বিষয় বিবেচনা না করে ,শিক্ষার গুনগত মান রক্ষা ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি গঠন করা জরুরি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক বৃন্দ ও এলাকাবাসীর দাবি।