বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে যে শহরের নাম.....সেই শহর হলো শ্রীমঙ্গল। অপরুপ রুপ আর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর শ্রীমঙ্গল এখন দেশ-বিদেশে পর্যটন শহর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। তাই বলা যায়.....'এমন শহর কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি'....
শুধু কি তাই? শ্রীমঙ্গলকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। এখানে দেখার আর মন ভরে উপভোগ করার আছে অনেক কিছু। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দোলা লাগে মনে। জাগে শিহরন।
শ্রীমঙ্গলের নৃ- তাত্বিক জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনাচার, ভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতি দেখলে আপনাকেও কিছুসময়ের জন্য পাহাড়ি হয়ে তাদের সাথে মিশে যেতে মন চাইবে।
উঁচু-নীচু টিলায় চা-বাগান, লেবু, আনারস, কাঠাল, রাবার, মুল্যবান প্রজাতির কাঠ এসবের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল। একে বলা হয় চায়ের রাজধানী।
মনিপুরি তাঁত শিল্পের জন্যও বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল। আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মনিপুরি পাড়া ঘুরে বেড়াতে পারেন। কিনে নিতে পারেন মনিপুরি তাঁতের তৈরী বিভিন্ন শাড়ি, থ্রীপিসসহ যে কোন কাপড়ের সামগ্রী। এছাড়া দেখে আসতে পারেন খাসিয়া পুঞ্জি। দেখতে পারেন তাদের পান আহরন এবং খাসিয়া মেয়ের পান প্রসেসিং এর কৌশল। তবে খাসিয়া পুঞ্জিতে প্রবেশ করতে খাসিয়া প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
এছাড়া লাউয়াছড়া বৃষ্টিবনে বিচিত্র সব গাছ-পালা, হরেক রকম পাখি, বিচিত্র জীবজন্তুু আপনাকে মুগ্ধ করবেই। একটানা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ-- যাকে বলা যায় 'ফরেস্ট মিউজিক'। এই মিউজিক আপনার মনকে নিয়ে যাবে কিছুক্ষনের জন্য হলেও স্বপ্নরাজ্যে।
এছাড়া হাজারো পাখির অভয়ারন্য বাইক্কা বিল, ডিনস্টন সিমেট্রি, বৃটিশদের তৈরী গলফ ফিল্ড, পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যাণ্ড সুলতান, পাহাড়ের বুকে লেবু-আনারস-রাবার বাগান দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে আপনার। বৃটিশদের তৈরি গলফ ফিল্ডটি এতই সুন্দর আর পরিপাটি যে, আপনাকে এখানে শুয়ে যেতে ইচ্ছে করবে।
তাছাড়া চা-বাগানের অপার সৌন্দর্য উপভোগের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ছোট-বড় ও ফাঁড়ি বাগান মিলে ৪৪ টি চা-বাগান। শ্যামল প্রান্তর কিছুক্ষনের জন্য হলেও আপনাকে নিয়ে কল্পনার জগতে । শুধু তাই নয়, চা-বাগানের মাঝে চা-কন্যাদের দু'টি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে। মন চাইলে তাদের সাথে সেলফিও তুলে নিতে পারেন।
ঘুরে দেখতে পারেন চা গবেষণা কেন্দ্র, টি রিসোর্ট, টি মিউজিয়াম আরও অনেক কিছু। যেতে পারেন চা প্রক্রিয়াজাতকরন ফ্যাক্টরি দেখতে। তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পুর্বানুমতি নিতে হবে।
শ্রীমঙ্গলের আরও অন্যান্য স্হানগুলো দেখতে হলে আনাকে ২/৩ দিন সময় হাতে নিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া পাশ্ববর্তী উপজেলার কমলগঞ্জে মাধবপুর লেক ও হামহাম জলপ্রপাতের আকর্ষন কিন্তুু কম নয়। অদ্ভুত এই লেক আর জলপ্রপাত আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
শ্রীমঙ্গলে থাকা এবং খাবার জন্য অনেক উন্নতমানের হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট, বাংলো গড়ে উঠেছে। আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনটিতে উঠতে পারেন এবং রাত্রিযাপন করতে পারেন। তাছাড়া পর্যটন স্পটে যেতে এখানে প্রচুর গাড়ি রয়েছে। আপনার পছন্দমত গাড়ি নিয়ে যে কোন স্পটে যেতে পারবেন। আছে গাইডের ব্যবস্হাও। ইচ্ছে করলে আপনি গাইড নিয়েও ঘুরতে যেতে পারেন। কোন ঝক্কি ঝামেলা নেই।
ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটারের পথ। সাড়ে ৪ ঘন্টায় পৌছে যাবেন শ্রীমঙ্গল। ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে শ্রীমঙ্গলের সড়ক ও রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্হা রয়েছে। তাহলে আর দেরি কেন? চলে আসুন পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চা-কন্যার দেশ শ্রীমঙ্গলে।