রাজশাহীতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যার রুপ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তবে এরইমধ্যে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নামায় ক্ষমতাসীন এ দলের নেতাদের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা। এমন পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে তৈরি হওয়া কোন্দল এখনই দমানোর আহবান জানিয়েছেন দলীয় নের্তৃবৃন্দ। নয়তো পরবর্তিতে এ পরিস্থিতির ঊত্তরণ ঘটানো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুকুলের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কাও করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাবেক সাংসদ মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহকে সভাপতি ও আবদুল ওয়াদুদ দারাকে সাধারণ সম্পাদক এবং লায়েব উদ্দিন লাবলু ও আয়েন উদ্দিন এমপিকে যুগ্ম সম্পাদক করে চার সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন। আর এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হলেও যথাসময়ে নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনি।
তবে দলের নেতা-কর্মিদের সকল দ্বিধাদন্দ্ব উপেক্ষা করে হলেও শেষ পর্যন্ত বিগত প্রায় চার মাস আগে ৭৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ একটি কমিটির তালিকা করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। যে তালিকায় পূর্বের কমিটির নেতৃস্থানীয় প্রায় ৩৫ জন নেতার নাম বাদ পড়ায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। যে কারণে সেসব পদবঞ্চিতরা প্রস্তাবিত এ কমিটি অনুমোদন না করার দাবি জানিয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর দুটি অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগ পত্রে দলের স্বার্থে প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদন না দিয়ে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি জানানো হয়।
অনুমোদনের জন্য প্রেরিত ওই প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জেলা কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, এমপিদের সুপারিশে অনেককে পদ দিতে হয়েছে। আর প্রেরিত ওই পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনেককেই চিনি না। এরপরও এ ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। এখন কেন্দ্রীয় কমিটি যেটা ভালো বিবেচনা করবে সেটাই হবে।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগেও বাড়ছে অস্থিরতা। কারণ গত ১ মার্চ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে দলের হাই কমান্ড পূর্বের সভাপতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকেই বহাল রেখে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রেরণের নির্দেশনা দেন। যার বাস্তবায়ন আজও ঘটেনি। তবে মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে এ সময়সীমা বৃদ্ধি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দ সর্বশেষ সময়সীমা বেঁেধ দিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এরপর দলের হাই কমান্ড আরও সাতদিন সময় বাড়ায়। সে হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।
তবে দলীয় সূত্র বলছে, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছেন। যেখানে দলের নিস্কৃয়দের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত এ কমিটিতে পদ পেতে দলের কিছু প্রভাবশলী নেতা সক্রিয় রয়েছে। সে কারণে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ এ কমিটির চূড়ান্ত কপি পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে।
তবে প্রস্তুতকৃত পূর্ণাঙ্গ এ তালিকার বিষয়ে দলের একাধিক সূত্র বলছে, দলের ভিতরে ও বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি মহানগর কমিটি নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ অপশক্তিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারিদের জায়গা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা দলের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারও চালাচ্ছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে।
পুর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় সম্ভভ হয়নি। তবে পুর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকার ব্যাপারে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা পুর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। যে কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতাদের পদে রাখার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তালিকা জমা দিতে পারব।
এদিকে, জেলা ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মিদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা। বিশেষ করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা হলেও বাড়ছে উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নে আগাম মাঠে নেমে পড়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে বিরোধ বেড়েই চলেছে। যে বিরোধিতা সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্যে রুপে দেখা গেছে।
এদিন সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, দলীয় নেতাকর্মীদেরকে মারপিট, জামায়াত সম্পৃক্ততা, মাদক-সন্ত্রাসের সাথে সংশ্লিষ্টতাসহ সরকারি কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন তিনজন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরিফ, পবা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা নার্গিস আক্তার শেলী, কাটাখালি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোকনুজ্জামান মাসুদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোত্তালিব, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সামা, কাটাখালী পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শরিয়ত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।