মাত্র ৩ লক্ষ ৩০ হাজার দিয়ে সরকারের সমাজসেবা দপ্তরে চাকুুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেলিম হোসেনের নিকট থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার হাতিয়ে নিয়েছেন তপন সাধু নামে এক প্রতারক। বাকী ৫০ হাজার টাকা দিলে তবেই চাকুরী হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রতারক তপন সাধু।
শনিবার(২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামে শালিস বৈঠকে মুছলেকা দিয়ে মুক্তি পান প্রতারক তপন সাধু।
বাকী ৫০ হাজার টাকা দিবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন চাকুরী প্রত্যাশি সেলিম হোসেন। কথা ছিল টাকা দিলেই চাকুরী হবে অথচ দির্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও আজকাল বলে টালবাহানা করতে থাকেন প্রতারক তপন সাধু এবং সেলিমকে বলেন বাকী ৫০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
এরপর কৌশল পরিবর্তন করে তপন সাধু বাকী ৫০ হাজার টাকা দিলে চাকুরী হবে বলে জানালে সেলিম বাকী টাকা যোগারের চেষ্টা করেন। এরই মাঝে তপন সাধুর চাকুরী প্রতারনার বিষয়টি সেলিমের নজরে আসে। শুক্রবার(২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বাকী ৫০ হাজার টাকার জন্য তপন সাধু সেলিম হোসেন বাড়িতে পৌছলে তাকে আটকে দেয় সেলিম হোসেনের পরিবার।
পরে আস্তে আস্তে তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। এরপর চাকুরী প্রত্যাশি সেলিম হোসেন টাকা ফেরতের জন্য তপন সাধুকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু প্রতারক তপন সাধু টাকা ফেরত দিবেন বলে আজকাল বলে কালক্ষেপন করতে থাকে।
এদিকে চাকুরীর আশায় নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রতারক তপন সাধুর হাতে টাকা দিয়ে সেলিম এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেলিম হোসেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
সাধু তপন চন্দ্র রায় বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র ফোরাম লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি এবং উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নওদাবাস এলাকার ভুবেন চন্দ্র রায় এর ছেলে।
এ বিষয়ে চাকুরী প্রত্যাশি সেলিম হোসেন বলেন, সাধু তপনের কথা মতো চাকুরীর জন্য নিজের শেষ সহায় সম্বল বিক্রি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেই। ওই সাধু টাকা নেওয়ার পূর্বে আমাকে বলেছেন চাকুরী দিতে না পারলে সমুদয় টাকা ফেরত দিবেন। এখন শুধু টালবাহানা করে কালক্ষেপন করছেন। নিজের সবকিছু বিক্রি করার পর নিঃস্ব হয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করছি তবু চাকুরীর খবর নেই। অতপর আজ রাতে আবারও বাকী ৫০ হাজার টাকার জন্য এলে সাধু তপনকে আটক করি।
ভুক্তভোগী সেলিমের স্ত্রী জানান, আমার স্বামীকে সরকারের সমাজসেবা দফতরের অফিস সহকারী পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধু তপন চন্দ্র গত বছরের এপ্রিলে ২লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। চাকুরীর খবর কি এবং কবে চাকুরী হবে কথা বললেই টালবাহানা করে যাচ্ছেন।
এতোগুলো টাকা কিভাবে দিলেন জানতে চাইলে সেলিমের স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন বাস্তভিটা ও থাকার ঘরসহ শেষ সম্বল বিক্রি করে তাকে টাকা দেয়া হয়েছে। আমি এই ভন্ড সাধুর বিচার চাই।
এ বিষয় স্থানীয়রা জানান, এই সাধু প্রতারক মানুষের টাকা ও মন্দিরের কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেন। আবার শোনা যাচ্ছে পূজা উদযাপন কমিটির নির্বাচন করবে বলে প্রচার প্রচারনাও করছেন। এধরনের মানুষকে নিয়ে কখনো কোন সংগঠন চলতে পারে না। এলাকাবাসী এই প্রতারকের শাস্তির দাবী করেন।
এ ঘটনায় সাধু তপনকে উদ্ধার করতে তার বাবা মা ছুটে এসেছিলেন বলে জানা যায়। পরে সালিশের মাধ্যেমে আগামী দুই মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দিবেন মর্মে তপনকে তার বাবা মায়ের হাতে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে চন্দ্রপুর ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল বারেক সাধু তপন চন্দ্র কে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি সমাধানের লক্ষে আমরা সেলিমের বাড়ীতে সালিশে বসেছিলাম সেখানে সাধু তপন চাকুরীর কথা বলে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিবেন মর্মে সালিশে তিনশত টাকার স্টাম্পে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে চলে যান।
এ বিষয় সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ২৬ অক্টোবর অবশিষ্ট ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে স্টাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামায় সাক্ষর করেছেন সাধু তপন চন্দ্র ও তার বাবা, মা। এ সময় তাপনের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ্ ইউপি সদস্য দ্বীনবন্ধু রায়ের নিকট জমা রাখা হয়। টাকা পরিষোধ হলে তপন সেটি নিয়ে যাবেন।