ঢাকা পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পাঁচ নির্বাহী প্রকৌশলীর নানা অপকৌশল। এমনটাই দাবি ওই সব ডিভিশনের অধীনে গ্রাহকদের। সরকার ঘোষিত গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের বিপরীতে এই ৫ এক্সচেঞ্জ গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ সরেজমিন অনুসন্ধানে তার সত্যতাও মিলেছে। যাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তারা হলেন-স্বামীবাগ এনওসিএসের নির্বহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের খান এবং একই ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা(এসি) জাহাঙ্গীর আলম, বাসাবো ডিভিশনের মো.নাছির উদ্দিন, মানিকনগর এনওসিএসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন এবং মাতুয়াইল ডিভিশনের এক্সচেঞ্জ মহিবুল্লাহ পারভেজ।
স্বামীবাগ ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কে এম দাস লেনের ২৯/১/ডি বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ একই হোল্ডিং-এর তিন ইউনিটের ফ্লাট। তারা তিন ভাই। ওই বাড়ির বিদ্যুতের বকেয়া ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই বকেয়ার তিন ভাগের এক অংশ ৪০ হাজার। আহমেদ আলী এক্সচেঞ্জ কাদেরের নির্দেশে ৫ হাজার টাকা জমা দেন। ব্যাংকে টাকা প্রদানের পরের দিন আহমেদের রুমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। অপর দুই ভাই টাকা জমা দিয়ে সংযোগ নিতে দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ঘুড়াঘুড়ি করেন স্বামীবাগ ডিভিশনে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে মিলেনি বিদ্যুৎ। আনোয়ারা বলেন, তাঁর দেবর আহমেদ আলী এক্সচেঞ্জকে যা বলে সেই মতেই চলে। তিনি জানান,অসহনীয় গরমে মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে অতিকষ্টে রাত যাপন করছেন। এক্সচেঞ্জ আবদুল কাদের তাঁদের আশ্বাস করেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু তাঁর কোথায় কাজের কোন মিল নেই বলে দাবি করেন ওই ভূক্তভোগী আনোয়ারার। অনুসন্ধানে জানা গেছে আবদুল কাদের জামায়াত সংগঠনের সক্রীয় সদস্য। তার আচরণবিধি কার্যকলাপও তারই প্রমান মিলে। সম্প্রতি কোন এক কাজে তাঁকে সন্ধ্যা ৭.৪৬ মিনিটে তার মুঠো ফোনে কল দেয়া হয়। তিনি জানান এখন কেন ফোন করেছেন। আমি জামায়াতে আছি। কিন্তু তখন মাগরিবের বা এশার নামাজের কোনটারই সময় ছিল না। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় জামাত-শিবিরের কর্মকা- পর্যালোচনায় মানুষকে কষ্ট দেয়ার নজিরও কম নয়। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নানাভাবে কষ্ট দেয়াই হলো কাদেরের চরিত্র। এতে ডিপিডিসির এবং সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করার প্রয়াস বলে দাবি করেন স্বামীবাগ এলাকাবাসী। বাসাবো ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং এসি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ ও কম নয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ¦লবে। সরকারের এমন নির্দেশনাকে কোন তোয়াক্কাই করে না বাসাবোর এক্সচেঞ্জ নাছির। অতি সহজেই গ্রাহক যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ না পায় সে জন্য তিনি নানা অপকৌশল পথ অবলম্বন করে থাকেন। তাঁর হয়রানির এমন অনেক নজির আছে। প্রতিবেদক নিজেই নাছিরের কাছে হয়রানির স্বীকার। জানা গেছে এর আগে শ্যামলী ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকালে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে জনগণের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে প্রহারের স্বাক্ষী মুনজুরুল ইসলাম। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, মুন্না নামের গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেই দিচ্ছি বলে দীর্ঘদিন ঘুরানোর কারণে গ্রাহক ক্ষুদ্ধ হয়ে এক্সচেঞ্জকে লাঞ্চিত করেন। সেখানে অপমানিত হওয়ার পর তাকে সাতমসজিদ ডিভিশনে বদলি করে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। ওই প্রতিষ্ঠানে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করার পর তাঁকে আবার স্বামীবাগ ডিভিশনে স্থানান্তর করেন ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয়। এইখান থেকে পদন্নোতি দিয়ে বদলি করা হয় বাসাবো এনওসিএসে। নাছিরের কর্মকা-ে ওই ডিভিশনের অধিকাংশ কর্মচারী নাখোস। মানিকনগর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ডিভিশনে অবৈধভাবে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া এবং অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত লোড প্রদান ও আজিম উদ্দিন, দাগ-১১৯,দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ৮১ হাজার ৯'শ ৯৪ ইউনিটসহ মিটার গায়েব করা মিটার রিডার এবং কো-য়াডিনেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ। যথাযথ তথ্য প্রমান পাওয়া স্বর্থেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে দাবি মানিকনগর ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। মাতুয়াইল ডিভিশনের কর্মকর্তা মহিবুল্লাহ পারভেজের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। ডিপিডিসির বিধিতে বলা হয়েছে, মূল বিদ্যুৎ পোল থেকে ১০০ ফিটের নিচে হলে লুজ তার দিয়ে পার্শ্ব সংযোগ দিতে পারবে। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২৫০ ফিট হতে ৫০০ ফিট পর্যন্ত দূরে লুজ তার দিয়ে পার্শ্ব সংযোগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মাতুয়াইল ডিভিশনের অধীনে সরেজমিন নিউ মডেল টাউন এলাকায় যাওয়া হয়। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল বলেন, মূল পোল থেকে তার বাসার দূরত্ব ২০০ ফিট। তিনি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে লুজ তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে মাতুয়াইল ডিভিশন। ওই এলাকায় এমন শত শত অবৈধ পাশর্^ সংযোগ রয়েছে। আর্থিক সুবিধা না পেলে গ্রাহককে নানাভাবে হয়রানি করে বলে অভিযোগ রয়েছে ওই এনওসিএসের বিরুদ্ধে। আর্থিক সুযোগ পেলে সকল অনিয়ম নিয়মে পরিনত হয়। টাকা না দিলেই দেখানো হয় নানা হাইকোর্টÑসুপ্রিম কোর্ট। স্বামীবাগ ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের খান এবং এসি জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ করলেন সেন্ট্রালের চীফ ইঞ্জিনিয়ার এ.এফ.এম মোবিন। তিনি বলেন, স্বামীবাগের এক্সচেঞ্জ এবং এসির এই পদে দায়িত্ব পালনের কোন যোগ্যতাই নেই। বিষয়টি ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করার কোথা জানান তিনি। এমব নানা অভিযোগের বিষয়ে স্বামীবাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের খান বলেন আমি কোন গ্রাহককে হয়রানি করিনা। মাতুয়াইল ডিভিশনের এক্সচেঞ্জ মহিবুল্লাহ অনিয়ম-দুর্নীতি, গ্রাহক হয়রানির কথা অস্বীকার করেন। তবে বিধি লঙ্ঘন করে পাশর্^ সংযোগের বিষয়ে বলেন আমার দায়িত্ব পালনকালে আমি লুজ তার দিয়ে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ দেইনি। যদিও দেয়া হয় তাহলে আগের কর্মকর্তা দিয়েছেন। এসি জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থতার কারণে কোথা বলতে রাজি হননি। বাসাবো ডিভিশিনের এসি এবং এক্সচেঞ্জ নাছিরের সাথে ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১ টা ৩৩ মিনিটে মুঠো ফোনে কল দেয়া হয় এবং একটি এসএমএস করা হয়। ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং মেসেসের কোন উত্তর ও দেননি তিনি। মানিকনগর ডিভিশনের এক্সচেঞ্জ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন অপরাধে ৩ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মর্তাদের জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে তাদের হাত অনেক শক্তিশালী। যার কারণে উপরের কর্তাব্যক্তিদের ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পাঁচ ডিভিশনের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাওয়া গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানকে ফোন দেয়া হয়। তিনি ব্যস্ত থাকায় কোন মন্তব্য করতে পারেননি। বিদ্যুৎ সচিব মো. সুলতান আহমেদকে কয়েক দফা ফোন করা হয়। পরিশেষে তাঁর দপ্তরে ৯৫১১০৩০ এই নাম্বারে ৩ টা ৫৬ মিনিটে যোগাযোগ করা হলে সচিবের পিও জিয়াউর রহমান বলেন, সার দপ্তরে আছেন। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কোথা বলছেন। তবে সচিবকে একাধিকবার এসএমএস করে ও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি।