রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গির্জায় তিন দিন এক কিশোরীকে (১৫) আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার ফাদার প্রদীপ গ্যা গরীকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর আমচত্বর সংলগ্ন বিশপ হাউজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে রাত ৯টার দিকে তানোর থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়।
র্যাব-৫ এর রাজশাহীর কোম্পানি অধিনায়ক এটিএম মাইনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের খবর জানতে পারার পর থেকেই পলাতক প্রদীপ গ্যা গরীকে আটকের জন্য তারা প্রচেষ্টা শুরু করেন। পরে রাতেই তাকে বিশপ হাউজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে তানোর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
তানোর উপজেলার মু-ুমালা মাহালীপাড়া এলাকার সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী গির্জার ফাদার প্রদীপ। এলাকার আদিবাসী খ্রিস্ট্রান সম্প্রদায়ের ওই কিশোরী গত শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়ির পাশে ওই গির্জার পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পরদিন রোববার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ভাই। এরপর সোমবার দুপুরের পর জানা যায়, নিখোঁজ কিশোরী গির্জার ফাদার প্রদীপের ঘরে বন্দি অবস্থায় আছে। পরে কিশোরীর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার লোকজন ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। এরপর সন্ধ্যায় গির্জার ভেতরেই শালিসি বৈঠক বসে।
সেখানে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ফাদার প্রদীপকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। আর ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছে না দিয়ে গির্জার ভেতরে সিস্টারদের কাছেই রাখা হয়। তখন বলা হয়, ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে নিখোঁজের জিডি প্রত্যাহার করে নিলে তাকে পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত ওই কিশোরীর খরচ বহন করবে গির্জা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই কিশোরীর ভাই থানায় গিয়ে জানান তার বোনকে পাওয়া গেছে। কিন্তু তারপরও ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছে দেয়া হয়নি। গির্জার প্রধান ফাদার প্যাট্রিক গমেজ ও শালিসি বৈঠকের প্রধান কামেল মার্ডি তাকে আটকে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো গির্জা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় রাতে থানায় একটি ধর্ষণের মামলা করেন ওই কিশোরী ভাই।
ওসি রাকিবুল হাসান জানান, শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই কিশোরীকে বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ফাদার প্রদীপকেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।তানোরে কিশোরীকে গীর্জায় আটকে রেখে তিনদিন ধরে ধর্ষণ গ্রাম্য শালিসে আপস করে ফাদারকে ক্লোজ করা হয়েছে
তানোর প্রতিনিধি : তানোরে গীর্জায় ৭ম শ্রেনীর এক আদিবাসি ছাত্রীকে গীর্জায় আটকে রেখে তিনদিন ধরে ধর্ষণ করেছে গীর্জার ফাদার। ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলার মুন্ডমালা মাহালী পাড়ার সাধু মেরি গীর্জায়।
আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলাবর সন্ধায় তানোর থানা ও মুন্ডমালা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গীর্জা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই আদিবাসী কিশোরীর বড় ভাই বাদি হয়ে গীর্জার ফাদারকে আসামি করে তানোর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী জেলা র্ধম প্রদেশের তিনজন প্রতিনিধি ও স্থানীয় গ্রামের দুইজন গ্রাম্য প্রধান এবং তানোর উপজেলার আদিবাসী পারগানা পরিষদের সভাপতি ও মুন্ডুমালা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামিল মার্ডি ওই গীর্জায় শালিস বৈঠক বসান।
শালিস বৈঠকে ওই কিশোরীসহ তার পরিবারের লোকজনকে ধর্মের দোহাই দিয়ে এবং লেখাপড়ারসহ ভরণ পোষন ও বিয়ে দেয়া পর্যন্ত সকল দায়িত্ব নেয়ার কথা বলে বিষয়টি আপস করে দেয়ার নামে ধামাচাপা দেন এবং অভিযুক্ত ধর্ষক গীর্জার ইনচার্জ ফাদার প্রদীপ গে গরীকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ক্লোজ করে ধর্ম প্রদেশ রাজশাহীর গীর্জায় নেয়া হয়।
পরে মঙ্গলবার বিকালে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনাটি গ্রামবাসীর কাছে প্রকাশ করলে গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তানোর থানা পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে মেডিকলে পরীক্ষার জন্য থানায় নিয়ে আসেন। তবে, অভিযুক্ত ফাদারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিম। অপর দিকে গ্রাম্য শালিসের নামে প্রহসন করে ধর্ষনের মত ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কিশোরীর ভাই বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠে ঘাষ কাটতে গিয়ে তার বোন বাড়ি ফিরে আসেনি, বিভিন্ন স্থানে খুজাখুজির পর ২৭ সেপ্টেম্বর রোববার তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা ওই কিশোরীকে গীর্জার ফাদারের ভবনের ছাদে দেখতে পায়।
পরে ওই কিশোরীর পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করতে গেলে ফাদার বাধাদেন এ সময় স্থানীয়রা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজশাহীর জেলা র্ধম প্রদেশের ইনচার্জকে বিষয়টি অভিহিত করেন। পরে রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের তিনজন প্রতিনিধিসহ গীর্জায় সালিস বৈঠক বসিয়ে সকলেই ফাদারের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে দেন।
এবিষয়ে সালিশ বৈঠনে থাকা তানোর উপজেলা আদিবাসি পারগানা পরিষদের সভাপতি ও মুন্ডমালা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামিল মার্ডী বলেন, কিশোরীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি আপস করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু গ্রামবাসী কিশোরীর ভবিষতের কথা চিন্তা না করেই বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছে এখন যা হওয়ার আইনের মাধ্যমেই হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ফাদার প্রদিপ গে গরীর সাথে যোগাযোগরে জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধায় গীর্জা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছে, কিশোরীর ভাই বাদি হয়ে ফাদারকে আসামি করে থানঅয় মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন অভিযুক্ত ফাদারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিশোরীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য (আগামীকাল) বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।