স্বরুপকাঠিতে পানির গতির সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় বাড়ছে বিভিন্ন ছোট প্রজাতি মাছ শিকারিদের আনাগোনা। উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালায় বাঁশের শলাকা,কটের সুতা,ও তাল গাছের আঁশের শলা দিয়ে তৈরি এক ধরণের খাঁচা বিশিষ্ট বিশেষ যন্ত্রের নাম মাছ ধরার ফাঁদ। সারা বছরই এ ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করছে এখানকার কর্মজীবি মানুষ। নিজেদের চাহিদা পুরণ করে বানিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা পাইকারি দরে বিক্রয় হচ্ছে এখানকার পাচমিশালী মাছ। মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি প্রধান কাঁচাউপদান হলো বাঁশের শলাকা,কটের সুতা,ও তাল গাছের আঁশ। এসব ফাঁদ তৈরির শিল্প বেশীর ভাগ কারিগরই হলেন নারী। পিরোজপুরের নেছারাবাদে উপজেলার বলদিয়া, আটঘর কুড়িয়ানা, জলাবাড়ী, দৈহারী, গুয়ারেখা, সারেংকাঠি, সমদায়কাঠি, দেউলবাড়ী,দোবড়া, দীর্ঘা, আমড়াঝুড়ি ও কলারদোয়ানিয়া এসব এলাকার প্রায় ২৫ হাজার শিশু থেকে নারী-পুরুষ মাছের ফাঁদ তৈরি ও মাছ শিকারের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করছে। আষাঢ়, শ্রাবণ,ভাদ্র, আশ্বিন,কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই ছয় মাস গ্রাম-বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম মাছ শিকারের উপকরণ বাঁশ, সুতার তৈরি চাঁই, বুচনা, গড়া, চরগড়া ,খুচইন, খলশানি বা ইছাচাই ইত্যাদি দিয়ে দেশীয় ছোট- ছোট মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এসব মাছ ধরার নানা আকার আঙ্গিতে ফাদগুলোর রয়েছে এলাকা ভেদে এর অনেক নাম, আবার এলাকা ভিক্তিক মাছ ধরার এসব যন্ত্রের রয়েছে নামের বিভেদণ্ডযেমন ঘুনিচাই,কইয়া চাই, বড় মাছের চাই, জিহ্বা চাই, গুটিচাই ইত্যাদি। বাঁশের এ খাঁচা যন্ত্রের দ্বারা পল্লীখাল, বিল অঞ্চলের ধানী জমির খেতের মেঝের রেতের খাল, ডোবা-নালা ও পরিত্যাক্ত পুকুর থেকে পুটি, টেংরা,খলিশা, চিংড়ি, বাইলা, কুচিয়া, শিং, কই, ডগরী, রইনা ও পাঙ্গাসের পোনাসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ শিকার হচ্ছে বর্ষা থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত। তবে এক এক ধরণের ফাদদিয়ে এক এক ধরনের মাছ ধরা হয়। আবার কোন ফাদ, কোন জলাশয় পাতলে মাছ আটকা পড়বে তা পানি ও পানির গতির উপর নির্ভর করে। সব ফাদে সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে না। এসব মাছ পানিতে চলাচলা করতে করতে একসময় ফাদে ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। কারণ মাছ শিকারের এসব যন্ত্রের ৯ থেকে ১১টি অংশ থাকে। যেমন- ফাদের বড়ি, খুলি বা খোলা, ফাদের মাঝের পত্তান, মুখের পত্তান, ফাদে মাছ আটকে থাকার তলিদিয়া, জিহ্বা, দুই পার্শে ২টি চাক ও ফাঁদ আটকে রাখার জন্য মাটির সাথে কুপে রাখা ২টি কুইন। আটকা পড়া ছোট মাছগুলো এ গুলো বেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না।