ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ‘শিক্ষাগুরু’ মুকুল ফৌজ ও মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১১ টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ময়মনসিংহবাসীর কাছে তিনি ‘রতন স্যার’ কিংবা ‘রতন দা’ হিসেবে পরিচিত।
আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন ঐতিহ্যবাহী মুকুল ফৌজ ও মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক।
শুক্রবার বাদ জুম্মা নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতী করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন। জানাযার আগে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন, গৃহায়ণ ও গণপূূর্ত মন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মরহুমের পুত্র অরূপ চৌধুরী।
জানাযা শেষে তাঁর মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।
আমির আহম্মদ চৌধুরীর জন্ম ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউয়িননের হাসানপুর গ্রামে। তবে জন্ম ফেনী হলেও তার পড়াশুনা, বেড়ে উঠা সব ময়মনসিংহ ঘিরেই। ফেনীর আদি নিবাসী রতন চৌধুরীর পরিবার ময়মনসিংহ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন বাবার চাকরির সুবাদে। ময়মনসিংহবাসীর কাছে তিনি ‘রতন স্যার’ কিংবা ‘রতন দা’ হিসেবে পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন সংগঠক, খেলোয়াড় এবং সৃজনশীল চেতনায় উদ্ভাসিত মানুষ। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ময়মনসিংহের শিক্ষা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য।
উল্লেখ্য, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আনন্দমুখর পরিবেশে শিক্ষায় আলোকিত তিনি গড়ে তুলেন ময়মনসিংহের বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়। মুকুল নিকেতন আর রতন স্যার বা রতন দা যেন এক সুতায় গাঁথা। ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে সফল এই সংগঠক ১৯৫৯ সালে শহরের মহারাজা রোডে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ময়মনসিংহ মুকুল ফৌজ’। শিশু-কিশোরের মেধা বিকাশ ও চরিত্র গঠনের এই প্রতিষ্ঠানটিই ১৯৭০ সালে মুকুল নিকেতন স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জরাজীর্ণ একটি ঘরে ৪২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুকুল নিকেতন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১শ ৭৮ জন। শিক্ষার্থী রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। তার স্নেহ-মমতা আর শাসনে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মেধাবী নাগরিক। তারা বর্তমানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত হয়েছেন স্ব-মহিমায়। স্বপ্নবান রতন চৌধুরী তার বর্ণাঢ্য সাফল্যময় জীবনে অর্জন করেছেন অনেক সম্মানজনক পুরস্কার।