বিশ্ববাজারে ইমেজ হারাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত চিংড়ি। অসাধু চক্রের তৎপরতায় রফতানি করা চিংড়ি বিদেশ থেকে ফেরত আসছে। দিন দিন কমছে চাহিদাভ নষ্ট হচ্ছে বিদেশী বাজার। খুলনা অঞ্চলের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাগদা ও গলদা চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর জন্য জেলিসহ নানা অপদ্রব্য প্রয়োগ করে। বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে ওসব অপদ্রব্য প্রয়োগের দায়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হলেও কোনোভাবেই তাদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। মৎস্য অধিদফতর এবং চিংড়ি খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে চিংড়িতে মড়ক লেগে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। সেজন্য কম চিংড়ি উৎপাদন করে অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলিসহ নানা উপকরণ পুশ করে চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করে। ওসব জেলি মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ফলে জেলি প্রয়োগ করা চিংড়ি রফতানির পর আবার দেশে ফেরত আসছে। রফতানি বাজারে দেশের চিংড়ির সুনামও নষ্ট হচ্ছে। খুলনার নতুন বাজার ও রূপসায় ৭ শতাধিক ডিপো রয়েছে। ওওই এলাকার ডিপোগুলোয় চিংড়িতে অপদ্রব্য প্রয়োগ করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে চিংড়িতে ঢুকিয়ে দেয়া হয় ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগুদানা, এরারুট, লোহা বা সিসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন পদার্থ। যা মাছের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের শাস্তিও দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ওই অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না।
সূত্র জানায়, প্রশাসন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১০৫টি অভিযানে পুশ করা ১ হাজার ৬২০ কেজি চিংড়ি জব্দ করেছে। তাতে জরিমানা করা হয় ৯ লাখ ২ হাজার টাকা এবং ৩ জনের কারাদ- হয়। ৮ অক্টোবর রাতে র্যাব-৬ ডুমুরিয়ার শাহাপুর এলাকায় ৫০০ কেজি পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করে। ওই সময় দুটি ডিপো মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তার আগে ৬ অক্টোবর রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকায় অভিযানে ৩ জনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, মৎস্যজাত দ্রব্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১০ ধারায় (২) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫১ ধারা অনুযায়ী চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডুমুরিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জীব কুমার দাশ জানান, করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ ভীত হলেও অসাধু চক্র চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করায় পিছ পা হচ্ছে না। ফলে রফতানি করার পর বিদেশে সম্মান নষ্ট হচ্ছে। সেজন প্রশাসন থেকে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। আর ওই লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।