বিভিন্ন ঘটনায় গডফাদারদের সঙ্গে নাটের গুরু বা গুরুজীদের সম্পর্ক মধুর বলে, গডফাদারদের চালিকা শক্তিও নাকি গুরুজীরা। ক্যাসিনো কেলেংকারী থেকে নিয়ে আরও যে সমস্ত বেসামাল ঘটনা সংগঠিত হয়েছে প্রায়টিতেই ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে গডফাদারদের কাছ থেকে গুরুজীদের নাম গণমাধ্যমে বেড়িয়ে আসছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় গুরুজীদের দৃশ্যত তেমন শাস্তি চোখে পড়ে না। যে কারণে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে বেসামাল ঘুষ, দুর্নীতির সংবাদ ‘লিড নিউজ’ হিসেবে প্রকাশিত, প্রচারিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এ নিবন্ধটি লেখার সময়ও ১২ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরে “রেলওয়ের করোনা রোধ ও সুরক্ষা পণ্য ক্রয়ে বেশুমার চুরি,” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। তাতেও নাটের গুরুজী ও কুশীলবরা এড়িয়ে যেতে পারে না। তাতে দেখা যায় রেলের করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৭৫০ টাকার আইআর থার্মোমিটার কেনা হয়েছে ১২ হাজার ৩০০ টাকায়। ১২০ থেকে ২০০ টাকা দামের কে.এন-৯৫ মাস্ক কেনা হয়েছে ৭২৭ টাকায়। ৬ টাকা দামের প্লাস্টিকের সাধারণ হ্যান্ড গ্লাভস ৩২ টাকায় কেনা হয়েছে। তাতে সরকারের মোটা অংকের অর্থ গচ্ছা গিয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে সাধারণ বাজার দরের চেয়ে ৩৪ গুণ বেশী দামে রেলের পণ্য ক্রয় করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এসব কিছু দেখে মনে হয় গডফাদার ও নাটের গুরুদের (গুরুজী) ভোগ ও বসন্ত কাল যেন শেষ হয়নি। যাকে বলা হয়ে থাকে তাদের যেন স্বর্গরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন বার্তা দিলেও এ শ্রেণীটা যেন তারপরও সাবধান হচ্ছে না। যা ভাবলে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়। তারপরও গডফাদার ও নাটের গুরুজীরা কেন যেন সাবধান হচ্ছে না এবং ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ তুলে না ধরলেই নয়। যদিও আজকাল এ ধরণের উদাহরণের কমতি নেই। সাবেক সেনাপ্রধান, তত্ত্বাবধায়কের উপদেষ্টা, ওয়ান ইলেভেনের সময় দুদক চেয়ারম্যান লেঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মশহুদ চৌধুরী এক সময় কিশোরগঞ্জে এক জনমত সভায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমি দুদকের দায়িত্ব নিয়ে খুব বিপদে আছি। দুদক অক্লান্ত পরিশ্রম করে তথ্য, উপাত্ত দিয়ে গডফাদারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রুজু করে থাকে। মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে আদালতে যাওয়া পর্যন্ত একশ্রেণীর নাটের গুরুজীরা পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। এমনকি আদালতেও তাদের পক্ষে একশ্রেণীর লোক তীব্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও সহায়তা করে থাকে। সে যাতনার যেন অন্ত নেই। অনেক সময় মনে হয়, দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে যেন হাঁফ ছাড়িয়ে বাঁচি। তিনি আরও বলেছিলেন, ঊধংু ঃড় ংধু নঁঃ ফরভভরপঁষঃ ঃড় ফড় অর্থাৎ বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। লেঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মশহুদ চৌধুরীর এ উক্তিগুলো প্রায় সময়ই মনে হয়। যদিও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে উত্তোরনই পাথেয়। তিনি গডফাদারদের চেয়ে নাটের গুরুদের (গুরুজী) কোনো অংশ খাটো করে দেখেননি বলেই হয়তো আবেগ, উচ্ছাস ও আক্ষেপ করে এ বিষোদাগার করেছিলেন।
ক্যাসিনো কেলেংকারীসহ অন্যান্য বেসামাল দুর্নীতির ভেতর বাহির পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নাটের গুরুজীরা একটা বড় ফ্যাক্টর। ক্যাসিনোর গডফাদাররা দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও বিভিন্ন সময়ে যাদেরকে বিশাল অংকের টাকা
দিয়েছে, তাও বলে গেছে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। এ নিয়ে প্রথম প্রথম খুব তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেলেও পরবর্তী সময় এর তেমন আপগ্রেড আর দেশের মানুষ দেখতে পায়নি। যেন ভূতের আলো বা আলেয়ার মতো নিভে গেছে। অনেকেরই ধারণা এ শ্রেণীটা খুবই শক্তিশালী। তা না হলে বছরের পর বছর ওদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকার কথা নয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশের অনেক নামীদামী কলামিস্ট ও জাতীয় পত্রিকার অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিকদের সংবাদ ও সংবাদ প্রতিবেদন বহুবার অনেকেরই দৃষ্টিতে এসেছে। এখনও অনেকেই লেখে যাচ্ছেন।
একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সভায় বলেছিলেন, দেশ আগাচা, পরগাছায় ভরে গেছে। তাদের সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। আরও বলেছিলেন, আমি দেশের মানুষের জন্য বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আনি, আর কিছু চাটার দল তা লুটপাট করে খায়। তা কোনো অবস্থাতে বরদাস্ত করা হবে না। মওলানা ভাসানীও এক সময় পল্টনের জনসভায় খামোশ কন্ঠে বলেছিলেন, ভাবের পাগলরা দেশের বারটা বাজিয়েছে। এই ভাবের পাগলদের থামাতে না পারলে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি পদে পদে বাধার সৃষ্টি করবে। এই জঞ্জাল ও জঙ্গলকে পরিস্কার করতে হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এত কিছুর পরও স্বাধীনতার এত বছরেও দেশ থেকে গডফাদার ও তাদের ক্রীড়নক নাটের গুরুদের প্রভাব প্রতিপত্তি তো কমছেই না, বরং ঘূর্ণিঝড় ও সোনামির মতো সামনে এগিয়ে চলছে।
অনেকেই মনে করে, গডফাদারদিগকে যদি নাটের গুরুজীরা আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়, তবে কোনো পর্যায়ের গডফাদাররা বেসামাল ঘুষ দুর্নীতি, অনিয়ম করার এত সাহস পাওয়ার কথা নহে। যত প্রজেক্টে অনিয়ম, দুর্নীতি হচ্ছে, তা তদন্তকালে কোনো না কোনো সিন্ডিকেট এবং গুরুজীদের নাম অকপটে বেড়িয়েই পড়ে। যা লোকানোর বা সামলানোর সুযোগ একেবারেই থাকে না। ওএমএসের চাউল, সাশ্রয়ী মূল্যের ১০ টাকা কেজির চাউল নিয়ে যে কেলেংকারী ধরা পড়েছে, তাতেও একটা মধ্যস্বত্বভোগী বা নাটের গুরুজীদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে না পাওয়ার অবকাশ থাকেনি। এমনিভাবে পেঁয়াজ, আটা, আলু, তেল, চিনি, চাউলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। এখানেও গডফাদারদের সাথে সিন্ডিকেট ও নাটের গুরুজীদের কারসাজি লক্ষ্য না করার কথা নয়। সম্প্রতি হঠাৎ করে ২৫/৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৯০/১০০ টাকা এবং ৩০ টাকা কেজির আলু ৫০/৫৫ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালে আড়তদাররা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দোকানপাট বন্ধ করে চলে যায়। তাতে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয় এবং রাতারাতি দাম আরও বেড়ে যায়। এমনি ঔষধের পাইকারি বাজার মিটফোর্ডে ঔষধ প্রশাসনের ডিজি, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার লোকজন এক সময় ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ জব্দ করার জন্য অভিযান চালালে সেখানেও প্রচন্ড বাধা আসে। সেখানেও সিন্ডিকেটের সাথে গডফাদার ও নাটের গুরুজীদের সংশ্লিষ্টতা ফুটে ওঠে। যা কারও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই পরাহত।
বিভিন্ন অফিস ও সংস্থায় প্রায় সময়ই গণমাধ্যম ও মিডিয়ায় যে অনিয়ম, ঘুষ দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতেও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এ সমস্ত অফিস ও সংস্থার গডফাদারদের সাথে অনুঘটক বা নাটের প্রভাবশালী গুরুজীদের আর্শিবাদ রয়েছে। এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ স্বাস্থ্য সুরুক্ষা সামগ্রী নিয়ে যত অনিয়ম, দুর্নীতি প্রকাশিত হয়েছে তাতেও গডফাদারদের সাথে নাটের গুরুজীদের চেহারা অকপটে বেড়িয়ে এসেছে। প্রেক্ষাপটে মনে করে, গডফাদারদের সাথে নাটের গুরুরা এমনভাবে মিশে আছে যা জিগার কষের মতো।
বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, কোনো অফিস, আদালত, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজের টেন্ডার আহবান করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট কনসালটিং ফার্মের মালিকরা নাকি প্রভাবশালী নাটের গুরুদের সহযোগিতায় কাজ ভাগিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। যা ক্যাসিনোর গডফাদার স¤্রাটের কাছ থেকে অনেকেরই নাম গণমাধ্যমে বেড়িয়ে এসেছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুরে মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানকে পুলিশ নির্মমভাবে হত্যার পর এ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও টেকনাফের ওসি প্রদীপ দাস নন্দলালকে দিয়ে যে মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলা সাজিয়ে ছিল তাহাও নাকি নাটের গুরুজীদের কারসাজি ছিল।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত থানা, হাসপাতাল, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, শিক্ষা অফিসহ আরও কত অফিসে যে গডফাদার ও নাটের গুরুজীদের বিড়ম্বনার কথা ভোক্তভোগীদের কাছ থেকে শুনা যায় যার সীমা পরিসীমা নেই। আমরা যা বলি তা বাস্তবে প্রতিফলিত ও পরিলক্ষিত হয়নি বলেই বছরের পর বছর এসব সমস্যা বিদ্যমান বলে অনেকেই মনে করে থাকে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এসব প্রজেক্টে ব্যবহৃত ২৮৫টি গাড়ীর খবর লাপাত্তা। এর মধ্যে বিভিন্ন মডেলের ২৬২টি জীপ ও ৬০৩টি হচ্ছে মোটর সাইকেল। যা বড় ধরণের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতেরই সামিল। এর মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তের পর ৫টি গাড়ী কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা দেয়া হয়েছে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ নং- সম (পরি) স্থায়ী কমিটি ৪৪/২০০৫ (অংশ- ১)/৭২১, তারিখ- ০৮/০১/২০০৬ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের সচল যানবাহন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি যানবাহন অধিদফতরের কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা করার নির্দেশনা রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে আমার এক প্রতিবেশী জমির কাওলা দিতে গিয়ে সেখানে জমি রেজিস্ট্রি সরকারের কাছ থেকে ৩ দফা নজরানা দেয়ার কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। এও জানতে পারে, যিনি জমি ক্রয় করবেন তার নাকি ৭ দফা নজরানা গুনতে হবে। আরও জানা যায়, এই নিয়ম ভঙ্গ করার ক্ষমতা নাকি জমি রেজিস্ট্রি সরকারের আদৌ নেই। জমি ক্রয় বিক্রয় করতে হলে এই প্রথা নাকি মানতেই হবে। এটা সিন্ডিকেটের নির্দেশনা। যা অলিখিত আইনসিদ্ধ প্রথাও বটে। এমনিভাবে বন্দুকের নতুন লাইসেন্স ও নবায়ন, ব্যবসা বাণিজ্যের লাইসেন্স ও নবায়ন, ইট ভাটার লাইসেন্স ও নবায়ন করতে হলে নাকি প্রথাসিদ্ধভাবে এল.এল.আর ফান্ডের নামে নির্দিষ্ট টাকা জমা দিতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক অফিসে এ নিয়ম চালু থাকলেও আইনে এমনিভাবে এলএআর নেয়ার কোনো বিধি বিধান আদৌ নেই। এ প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, এ প্রথা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত বেআইনী প্রথা। যা কারও কাম্য নহে।
কিছুদিন আগে চিঠিপত্রের কলামে জনৈক ব্যক্তি আক্ষেপ প্রকাশ করে লিখেছেন, তার সন্তান এস.এস.সি পরীক্ষায় স্কুল টেস্টে উত্তীর্ণ হলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আপনার সন্তানকে এই স্কুলের শিক্ষকদের নিকটই প্রাইভেট পড়তে হবে। না পড়লে এককালীন অগ্রিম টাকা দিতে হবে। সে ব্যক্তি এত টাকা তার সাধ্যের বাইরে এবং অপারগতা জানালে, প্রধান শিক্ষক নাকি রাগত স্বরে বলেছেন, আপনার সন্তানকে এখানে প্রাইভেট না পড়ালে পরীক্ষার অনুমতি পত্র বা এডমিট কার্ড ইস্যু করা হবে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানুষ গড়ার কারিগরদের মধ্যেও গডফাদার, নাটের গুরু বা সিন্ডিকেট রয়েছে। সব কিছুতেই মানুষের যাওয়ার জায়গা যেন দিন দিনই সীমিত হয়ে আসছে।
যেখানে নারী ধর্ষণ ও পাশবিকতা রুখতে আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান হচ্ছে সেখানে সম্প্রতি মৌলভী বাজারে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিচার দাবী করে প্রগতিশীল ছাত্ররা সমাবেশ করলে সেখানে হামলা চলে। শনিবার ১৭ অক্টোবর ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ফেনীতে লংমার্চে আক্রমন করে আহত করা হয়। অপরদিকে ৯ অক্টোবর শাহবাগে যখন বাম সংগঠনের উদ্যোগে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠান চলছিল তখন অপর একটি অনুষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগ নেতার হুংকার ছিল, “এদের চামড়া তুলে নেয়া হবে”। এসব হুংকার কিসের আলামত বহন করে থাকে। যা বিব্রত ও অনাকাংখিত দৃশ্যপট বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে থাকে।
কিছু অফিস, প্রতিষ্ঠান, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর, কর্পোরেশন ও বিভিন্ন সংস্থায় এমন কিছু লোক দেখা যায়, যারা গডফাদার ও গুরুজীদের চেয়েও যেন কম নহে। মনে হয় ওদের যেন দেখার কেউ নেই। বরং ওরা যেন জনগণের সেবক নয়, শাসক। যা দেখে স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে অনেকেই মনে মানে না, প্রাণে সহে না ও গায়ে জ্বালা শুরু হয়ে যায়।
সূত্রে জানা যায়, ২৫/১০/২০ ইং রাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেঃ আসিফ ও তার স্ত্রীকে এমপি হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান ও অন্যান্যদের রোষানলে পড়ে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। তাদেরকে র্যাব আটক করে থাকে। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়েছে। ইরফান সেলিমের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৮টি ওয়াকিটকি, ৫টি ভিপিএস সেট, ১টি দূরবীন, ৪০০ পিস ইয়াবা, বিপুল পরিমান বিদেশী মদ, শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ও অন্যান্য অবৈধ জিনিসপত্র। অনেকেরই প্রশ্ন একজন ক্ষমতাসীন এমপির পুত্র ও ওয়ার্ড কমিশনারের ইহা কিসের আলামত বহন করে থাকে।
মোদ্দা কথা গডফাদার ও নাটের গুরুজীরা যেন সর্বত্র বিরাজমান। তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে সমাজে অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্পর্শকাতর বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও গডফাদার ও নাটের গুরুদের কখনও বসন্তকাল ব্যতিত শীত ও বর্ষা আসতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এমপি, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, জেলা প্রশাসক বা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের সাথে যে আচরণ করেছেন, তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। যদিও এমপির এমন অসদাচরণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন মামলা করেছে।
এত কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের পর বলা যায়, সমাজ থেকে গডফাদারদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, অন্যায়, দুর্নীতি দূর করতে হলে তাদের পাশাপাশি নাটের গুরুজীদেরকেও একই কাতারে দেখতে হবে। ওদের কোনো দল ও দর্শন নেই। যেখানেই টাকা, ক্ষমতা, প্রভাব ও স্বার্থ সেখানেই গুরুজীদের আগমন ঘটে। এর বাইরে তাদের বিচরনই নেই। যত তাড়াতাড়ি নাটের গুরুদের অদৃশ্য তদারকি (টহংববহ ঢ়ড়বিৎ) প্রভাব ও প্রতিপত্তি কমানো যায় ততই দেশ, জাতি ও জনগণের মঙ্গল। তা না হলে তাদের প্রতিপত্তি, আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে গডফাদাররা ধরাকে সরা মনে করে যা করার না তাহাই করবে। অনেকেরই প্রশ্ন, এমনিভাবে গডফাদার ও নাটের গুরুদের অবিরাম ভোগ, বসন্তকাল ও স্বর্গরাজ্য আর কতদিন চলবে। গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে, উপরে পানি ঢাললে অনেক সময় গাছের শিকড়ে পানি পৌঁছায় না।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট