বিপুল পরিমাণ মারাত্মক বিপজ্জনক বিস্ফোরক ও দাহ্য জাতীয় পণ্যের মজুদে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্র ও স্থলবন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বন্দরগুলোতে জমা হওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, দাহ্য, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক কনটেইনার, কার্গো নিষ্পত্তি, নিলাম, ধ্বংস ও অপসারণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ছাড়াও সারা দেশের স্থলবন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, দাহ্য, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক পণ্য, এমোনিয়াম নাইট্রেট, বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য মজুদ রয়েছে। তার মধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষচট্টগ্রাম বন্দরে থাকা ৬০ লট বিপজ্জনক কেমিক্যালসহ পড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের ২১১ লট পণ্য নিলামে তুলছে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর নিয়মিত নিলামের অংশ হিসেবে এ নিলাম ডাকা হয়েছে। নানা জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যগুলো সম্প্রতি নিলামে বিক্রি ও ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে দাহ্য পদার্থ বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য নিলাম ও ধ্বংস করা হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ওসব পণ্য নিলামে তৎপর রয়েছে। তবে বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, বন্দরে মজুদ থাকা সব রাসায়নিকই বিপজ্জনক নয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক এবং দাহ্য কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য মজুদের কারণে দেশের সমুদ্র এবং স্থলবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ বন্দরগুলোতে মজুদ থাকা বিপজ্জনক পণ্যের নিলাম এখনো সম্পন্ন হয়নি। বন্দরগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে ওসব পণ্য জরুরিভাবে অপসারণ প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বন্দরগুলোতে মজুদ থাকা রাসায়নিক বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ধ্বংসের ক্ষেত্রে অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র ও সম্মতি নিতে হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয় সভা হয়েছে। এখন বন্দরগুলোতে যেসব রাসায়নিক কেমিক্যাল বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে সেগুলো দ্রুতই ধ্বংস করা হবে। কারণ বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক পণ্য মজুদের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন শেডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বিপজ্জনক কেমিক্যাল নিলামে তোলা কিংবা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত তারপর থেকেই কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য নিলামে তোলা শুরু হয়। সর্বশেষ নিলামে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের ৬০টি লট থাকছে। তার মধ্যে পি-শেডে রয়েছে ২৬টি লট, অন্যান্য শেডে ২৪টি লট। সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতি মাসে সাধারণত একবার করে নিলাম ডাকা হয়।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের পি-শেডে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে ৪৩টি লটসহ মোট ৪৯টি লট নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস একটি বিশেষ নিলামের আয়োজন করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ওসব পণ্যের নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ৪৯টি লটের ৪৩ টিতেই রয়েছে বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। আর ৬টি লটে পচনশীল ফলমূল রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক পণ্যগুলোর নিলাম না দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ধ্বংসের কাজ বাস্তবায়ন করবে কাস্টমস।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) ফরিদ আল মামুন জানান, বন্দরের পি-শেডে ৫ টনের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক মজুদ রয়েছে। তার মধ্যে হাইড্রোক্লোরাইড, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, বিপজ্জনক কঠিন পদার্থ, বিপজ্জনক উপাদান ছাড়াও কিছু কস্টিক সোডা রয়েছে। যা ধ্বংসের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, বন্দরের মজুদ বিপজ্জনক দ্রব্যের তালিকা পাওয়ার পর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিলামের জন্য ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আনা পণ্যও রয়েছে। বন্দরের চিঠি পাওয়ার পর পি শেডে থাকা বিপজ্জনক পণ্যসহ যেসব পণ্যের তালিকা আছে, সেগুলোকে নিলামে তোলা হয়েছে। ওসব পণ্য বন্দর থেকে বের করার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। আর যেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বা চিহ্নিত করা যায়নি সেগুলো পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করা হবে।