রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ভীম রাজার স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন নিদর্শন ধ্বসে যাওয়া প্রাসাদ অবশেষে সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে প্রত্বতত্ব¡ বিভাগ। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতমাসে প্রত্বতত্ত্ব¡ বিভাগের এসিষ্টেন্ট কাষ্টোডিয়ান এসএম হাসনাত বিন ইসলাম উল্লেখিত স্থান পরিদর্শন করেন। প্রাপ্ত তথ্য ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ভীমশহর গ্রামে এ রাজ প্রাসাদটির অবস্থান। কথিত আছে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজা ছিলেন ভীম চন্দ্র। তিনি উক্ত গ্রামের বসবাসের মাধ্যমে বিশাল এলাকা শাসন করতেন। তিনি এখানে প্রায় ৮ একর জমির উপর নির্মাণ করেন সুউচ্চ রাজ প্রাসাদ। চতুপার্শে বিশাল উচুঁ প্রাচীর বেষ্টিত নিরাপদ প্রাসাদে অবস্থান করতেন রাজা ভীম চন্দ্র ও তার ছোট ভাই ভূবন চন্দ্র সহ পরিবারের সদস্যরা। যেখানে প্রতিপক্ষের আক্রমনের কোন সুযোগই ছিল না। প্রাসাদ সংলগ্ন পুর্ব পার্শে সুরক্ষিত ও উচু স্থানে ছিল তাদের হাওয়া খানা। যেখানে তারা উপভোগ করতেন নির্মল বায়ু। এ প্রাসাদটি এলাকাবাসীর কাছে এখন বুরুজ নামে পরিচিত। রাজ প্রাসাদ থেকে পুর্বে প্রায় ৫ শ মিটার দুরে ছিল উচুঁ পাড় বেষ্টিত এক বিশাল আয়তনের পুকুর। প্রায় ১৬ একর আয়তনের এ পুকুরে রাজা ভীম চন্দ্র ও তার পরিবারের সদস্যরা হাতির পিঠে চড়ে এসে গোসল করতেন। যেটি এখন ভুয়ার পুকুর নামে পরিচিত। পুকুর ও পাড়ের অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান থাকলেও পুকুরটি অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। রাজা ভীম চন্দ্রের অপর ভাই ভূবন চন্দ্রের গোসলের জন্যও ভুয়ার পুকুর থেকে অনতিদুরে ছিল পৃথক একটি পুকুর। যেটি এখন ছোট পকড়া নামে পরিচিত। কথিত আছে প্রায় ৬ একর আয়তনের এ পুকুরটিতে ভূবন চন্দ্র ও তার পরিবারের সদস্যরাও পৃথক হাতির পিঠে চড়ে পুকুরটিতে গোসল করতেন। সেটির প্রায় ভরাট হয়ে গেলেও নাম মাত্র পুকুরটির অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান রয়েছে। এ প্রাসাদের পরিস্থিতি স¤পর্কে বলতে গিয়ে ভীম শহরের রমজান আলী, শাহাব উদ্দিনসহ অনেকে জানান, রাজা ভীম চন্দ্র ও ভুবন চন্দ্রের রাজপ্রাসাদটি মুল সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচু ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার লোকজন প্রাসাদের ইট ও সুড়কী নিয়ে যাবার কারনে এর উচ্চতা ১০ ফুট কমে গেছে। অপর দিকে রাজাদের জন্য ভুয়ার পুকুর ও ছোট পকড়া নামে যে দুটি বিশাল আয়তনের পুকুর ছিল সে গুলোও অনেকটাই ভরাট হওয়ার কারনে শুধু মাত্র পুকুর গুলির অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন এ প্রতিবেকের কাছে অভিযোগ করের, রাজা ভীম চন্দ্র ও ভুবন চন্দ্রের রাজ প্রাসাদ সহ তাদের গোসলের পুকুর গুলোসহ ৩০ একরের মত জমি রয়েছে। কিন্তু সে জমি গুলো এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি তাদের দখলে নিয়ে চাষাবাদ ও মাছ চাষ করছেন। তারা কি ভাবে জমি গুলো ভোগ দখলের সুযোগ পেল তা এলাকার সর্ব সাধারনের বোধগম্য নয়। এলাকাবাসীর দাবি, রাজা ভীম চন্দ্র ও ভূবন চন্দ্রের রাজপ্রাসাদ ও তাদের জমি গুলোর ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের খতিয়ে দেখে বেদখলকৃত জমিগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি রাজপ্রাসাদ ও পুকুর ২টি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়ার। এতে একদিকে যেমন সরকারের বেদখর হয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার হবে,পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এলাকাটিও পরিচিতি পাবে গোটা দেশে।
এ ব্যাপারে প্রত্বতত্ত্ব¡ বিভাগ রংপুর তাজহাটের এসিষ্টেন্ট কাষ্টোডিয়ান এসএম হাসনাত বিন ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, স্থানটি পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে এটি সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রতœতত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, স্থানটির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতœতত্ব বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।