আজ ১৭ নভেম্বর বাঙালির মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিপ্লবের মহান ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আগমন করেন। ওই সব গুণধর ব্যক্তিরা একদিকে যেমন মানুষ, দেশ ও সমাজের জন্য স্বপ্নের পসরার ফেরি করেন। অন্যদিকে একটা জাতিকে রক্ষা, উন্নতির দিকে এগিয়ে নেওয়া, জাতিকে সম্ভাবনার স্বপ্নও দেখান তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু স্বপ্নই বুনেন না, স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করে দেশ সেবায় আদর্শের এক অন্যন্য নিদর্শনও স্থাপন করেন। এমনই এক ব্যক্তি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি যেমন ছিলেন বাঙালি জাতির বাতিরঘর। তেমনই ছিলেন স্বৈরাচারের আতঙ্ক।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন : ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাধীন ধানগড়া মহল্লায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাজি শরাফত আলী। মা মজিরন বেগম। জন্মের পর বাবা আদর করে তার নাম রেখেছিলেন ‘চেগা মিয়া’। জন্মের পর খুব বেশীদিন বাবা-মায়ের আদর জোটেনি তাঁর কপালে। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি পিতা এবং এগার বছর বয়সে মাকে হারান। দুই ভাইয়ের মধ্যে মওলানা ভাসানী ছিলেন বড়। ছোট ভাই গোলাম আহমেদ খান বিয়ের কয়েক বছর পরই মারা যান। শৈশবকালে মা-বাবাকে হারিয়ে আবদুল হামিদ আশ্রয় নেন চাচা ইব্রাহীম খানের কাছে। চাচা ভর্তি করে দেন শহরের এক মক্তবে। কিন্তু তার ভালো লাগত না সেখানে। একদিন অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহজাদপুরের দূরসম্পর্কের ভগ্নিপতির কাছে যান মওলানা ভাসানী। সেখানে পড়াশোনা ছেড়ে ক্ষেতমজুরের কাজ শুরু করেন তিনি। কাজ করা অবস্থায় সেখানে একদিন ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে নাসির উদ্দিন শাহ বোগদাদী নামে এক পীর সাহেব আসেন। পীর সাহেব আবদুুল হামিদকে দেখে পিতৃস্নেহে কাছে টেনে নিলেন। পরে পীর সাহেবের সঙ্গেই ময়মনসিংহ জেলার বল্লা গ্রামে চলে যান। পীর সাহেব সেখানে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। মক্তবের পড়া শেষ করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে বছরখানেক থাকার পর তিনি পীর সাহেবের সঙ্গে আসামে চলে যান। ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওয়াকোলায় ‘বঙ্গ আসাম প্রজা সম্মেলন’ যোগদান ছাড়াও দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি বহুবার তার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জে এসেছেন।
এক সংগ্রামী মহাকাব্য : সাম্যবাদের আদর্শকে যিনি মনে প্রাণে গ্রহণ করে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের জন্য যিনি নিজের জীবনকে করেছিলেন উৎসর্গ তিনি হলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি কিংবদন্তি নেতার কৃতিত্ব নিয়ে মরেও অমর আছেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারণ মানুষের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন মজলুম জননেতা হিসেবে। অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার ছিল আপসহীন অবিরত সংগ্রাম। এই সংগ্রাম ছিল সা¤্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে। এই বিপ্লবী পুরুষ ক্ষমতা আর অর্থের কাছে কখনো আপস করেননি। বলা যায়, এসব নানা কৃতিত্বের জন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী নিজেই এক সংগ্রামী মহাকাব্য।
রাজনীতি ও সংগ্রামী জীবন : মওলানা ভাসানী ছিলেন এদেশের সব নেতার নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। খেলাফত আন্দোলন ও কংগ্রেসের রাজনীতির মধ্য দিয়েই মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। অত্যাচারী জমিদার শ্রেণীর জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কৃষক নেতা। তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাও বলা হয়। তিনি ১৯৪৭ সালের বিভাগ-পূর্ব সময়ে আসামে লাইনপ্রথা-বাঙাল খেদাওবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ আন্দোলন সংগ্রামের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ সরকার বহিরাগতদের একটি বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ করার জন্য ‘লাইন প্রথার’ প্রবর্তন করে এবং বাঙালি কৃষকদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে। মওলানা ভাসানী নির্যাতিত কৃষকদের পাশে দাঁড়ান এবং বাংলা থেকে বহিষ্কৃৃত হন। যখন সারা ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন চলছিল। ঠিক তখনই ভাসানীও জড়িত হয়েছেন দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে বন্যার কবল থেকে বাঙালি কৃষকদের রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। কৃষকসমাজ তাদের ত্রাণকর্তা রূপে তার ডাকে সাড়া দিতে লাগল। তিনি ধুবড়িতে ভাসানচরে বহিরাগত কৃষকদের সম্মেলন করেন। ওই সম্মেলনে কৃষকরা তাকে ‘ভাসানী’ উপাধি দেয়। ১৯৩৭ সালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লিগে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক আইন আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ভাসানীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৪৭ সালের ২১ জুন জোড়হাট জেল থেকে তিনি মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালে গঠিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা সভাপতি পদে আসীন হন তিনি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের গোড়াপত্তন করেন মওলানা ভাসানী। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর ২ এপ্রিল তার সভাপতিত্বে যুক্তফ্রন্টের সভায় শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে পল্টন ময়দানের এক জনসভায় তিনি পাকিস্তানকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলেছিলেন। পাকিস্তানের শেষদিকে তার অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তাকে নায়ক বলা হতো। তিনি যদি ভূমিকা না রাখতেন তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্ত করা কঠিন হতো। মওলানা ভাসানী ষাটের দশকজুড়ে স্বাধীনতার চেতনা সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সোচ্চার ছিলেন। ভারত সরকার গৃহবন্দী দশা থেকে মুক্তি প্রদানের পর তিনি ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন। রাজনীতির পাশাপাশি মওলানা ভাসানী সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। আসামে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আদমজী শ্রমিক আন্দোলন, ঘেরাও আন্দোলন, আসামের আন্দোলনের জন্য তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের সময় তিনি কারখানাকে রক্ষা করেই গণতান্ত্রিকভাবে সব আন্দোলন করেছেন। এই মহান নেতার নাম বাঙালি জাতি কখনো ভুলতে পারবে না।
স্বাধীনতার আলর্টিমেটাম : ১৯৭১ সালের ৯ই মার্চ বিকালে ন্যাপ প্রধান মওলানা ভাসনী ঢাকার পল্টন ময়দানে ন্যাপের বিশাল জনসভায় তাঁর ভাষণে ১৪ দফা ঘোষণা করেন। এসময় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা দানের আলর্টিমেটাম দেন। ২৫শে মার্চের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া না হলে তিনি ও শেখ মুজিবুর রহমান এক যোগে বাঙালির স্বাধীনতার অর্জনের জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করার হুঁশিয়ারী দেন। তুমুল করতালির মধ্যে সবার উদ্দেশে ভাসানী আরো বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী হতে যাবো না। কারো বাপের শক্তি নাই স্বাধীনতা ঠেকায়। পূর্ব বাংলাকে পৃথক রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমেই দেশের দু’ অঞ্চলের তিক্ততার অবসান হতে পারে। সংহতি এখন অতীতের স্মৃতি এবং কোনো শক্তিই স্বাধীনতার অধিকারকে ন্যাসাৎ করতে পারবে না। শেখ মুজিবুর রহমান বা বঙ্গবন্ধু বা যে বন্ধুই হোক না কেনো, পাকিস্তানিদের সঙ্গে ‘আপস’ করতে গেলে পিঠের চামড়া খুলে ফেলবো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি অনেক হয়েছে আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। লা কুম দ্বীনুকুম ওয়ালইয়া দ্বীন। অর্থ্যাৎ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’ এ নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।’ তিনি পাকিস্তানিদের উদ্দেশে দুর্বার কণ্ঠে বলেন, ‘তোমরা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা কর, আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র রচনা করব।’
বর্ষীয়ান মজলুম নেতা ভাসানী দ্ব্যর্থকণ্ঠে আরো বলেন, ‘শেখ মুজিব নির্দেশিত মার্চের মধ্যে কিছু না হলে, আমি শেখ মুজিবের সাথে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করবো। খামাকা কেহ মুজিবকে অবিশ্বাস করিবেন না। মুজিবকে আমি ভালো করিয়া চিনি।’ ওই বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ হয়। (তথ্যসূত্র : দিনকাল, সংগ্রাম, এফএনএস- ০৯.০৩.২০২০)
মওলানা ভাসানী নিজেই প্রতিষ্ঠান : টাঙ্গাইল শহরের অদূরে কোলাহল আর জৌলুস আর জনারণ্য থেকে সুদূর সন্তোষের নিভৃত শান্ত পল্লীতে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন শতাব্দীর মহানায়ক মওলানা ভাসানী। তার দর্শন ও দর্পণে জীবনভর প্রতিফলিত হয়েছে এ দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম ও গ্রামীণ মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের কথা-মৃত্যুর পরও সেই মওলানা ভাসানী ফিরে গেছেন তাদের কাছেই। জীবনের শেষ ও অনন্ত শয্যা রচনা করেছেন তাদেরই মাঝে। ১৯৭৪ সালে সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সময় মওলানা সাহেব বলেছিলেন, এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ সৃষ্টির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। মওলানা ভাসানীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপরেখা ও প্রকল্পে যে প্রাকৃতিক ও কর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তাতে এখানকার প্রতিটি মানুষের হাতকেই কর্মীর হাতে পরিণত করবে। উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করবে। শিক্ষা, উৎপাদন আর কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় ও মহামিলন ঘটলে এ দেশের সাধারণ মানুষ, আমজনতার ভাগ্য পরিবর্তিত হবে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা দূর হবে। সবার মুখে হাসি ফুটবে। মওলানা ভাসানী ৩১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য গড়ে তুলেন ট্রাস্টি বোর্ড। মূলত ট্রাস্টি বোর্ডের সব দায়দায়িত্ব মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হয়। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নিজে হাতে গড়া ৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সরকারিকরণ হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বালিকা হাইস্কুল ও শিশু স্কুল। পীর শাহ জামান (রহঃ) দিঘী, পীর শাহ জামান (রহঃ) মার্কেটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো নামকাওয়াস্তে টিকে আছে।
ধ্বংসের দারপ্রান্তে ভাসানীর প্রতিষ্ঠানগুলো: মওলানা ভাসানীর অনেক প্রতিষ্ঠানই আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে। বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিক্যাল কলেজ দুরবস্থার মধ্যে আছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সূচি-শিল্প স্কুল টিনের ঘর ভাঙা অবস্থায় আছে এবং কর্মকা- নেই। শান্তি সাবান কারখানা নেই। ঐতিহাসিক হক-কথার কোনো অস্তিত্ব নেই, এমনকি হক-কথার প্রেসটিও নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁত শিল্পের, মৎস্য খামার, কৃষি খামার ও রেশন প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব নেই। এছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কোরআন ও সুন্নাহ বিভাগ এবং হেফজখানা দুরাবস্থার মধ্যে চলিতেছে। শাহ নাসির উদ্দিন ভোগদারী এতিমখানাটিও সংকটাপন্ন। ঐতিহাসিক দরবার হলটিতেও বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। অপরদিকে মওলানা ভাসানীর নামে সয়াধানগড়ায় নিজবাড়িসহ আশপাশে সাড়ে তিন বিঘা জমি ছিল। ২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্য তাঁর মেয়েরা জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন শুধু স্মৃতি হিসেবে ভাসানীর বাবা-মার কবর ও একটি ঘর রয়েছে। ভাসানীর স্মৃতি ধরে রাখতে এলাকায় ১৯৯৬ সালে ‘ভাসানী যুব উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি পাঠাগার গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ২০০০ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জে ভাসানী সংসদ ও ভাসানী সংগীত বিদ্যালয় নামে দুটি সংগঠন রয়েছে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে সেগুলো ঢিমেতালে চলছে। ভাসানীর স্মৃতিরক্ষার্থে তার নামানুসারে সিরাজগঞ্জে মওলানা ভাসানী ডিগ্রি কলেজ, ভাসানী মিলনায়তন, ভাসানী পোস্ট অফিস ও ভাসানী সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। ভাসানীর আত্মজীবনী সম্পর্কে জানতে এবং তাঁর আদর্শ অনুসারে বর্তমান যুব সমাজকে গড়তে মওলানা ভাসানীর নামে তাঁর জন্মস্থান এলাকায় আধুনিক পাঠাগার স্থাপন করা বিশেষ প্রয়োজন।
বাধক্য ও মৃত্যু : ১৯৭৬ সালে ৫ এপ্রিল তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। ওই বছরের ২৮ মে তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই হাসপাতালে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষের ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে।
অনন্য এক মওলানা : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সারাজীবন মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি একইসঙ্গে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন। ছিলেন স্বাধিকার আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ। তিনি প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ভাসানী সাহেব সারাজীবন গ্রামে একটি কুঁড়েঘরে কৃষকের মতো জীবনযাপন করেছেন। যার কোনো ব্যাংক একাউন্ট ছিল না, গাড়ি ছিল না, বাড়ি ছিল না। তিনি কেবল আমাদের জাতীয় ইতিহাসে নয় বরং ভারত বর্ষের ইতিহাসের এক অনন্য রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। যতদিন মেহনতি মানুষের সংগ্রাম থাকবে, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, অসম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন মুক্তিসংগ্রামী মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান মওলানা ভাসানী।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)