মানুষের জীবন ধারণের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান বায়ু। বায়ুর বিশুদ্ধতা না থাকলে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু মানুষ দ্রুতই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। বাতাসে যেসব ক্ষতিকর ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে তা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এসব ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার রোববার থেকে টানা ছয় দিন ঢাকার বায়ুর মান আরো খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের তথ্য মতে, গত শনিবার ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ১২৮ ইউএস একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স); রোববার যা ১৫১ ইউএস একিউআই, সোমবার ১৫৭ ইউএস একিউআই, মঙ্গলবার ও বুধবার ১৬১ ইউএস একিউআই, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ১৬২ ইউএস একিউআই হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আইকিউ এয়ার ১৫০ ইউএস একিউআই পর্যন্ত বায়ুদূষণকে নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য অস্বাস্থ্যকর বলছে, কিন্তু ১৫০ ইউএস একিউআই হলে তা পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করে তারা। বায়ুর এই ধরনের মান থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বৃদ্ধ, শিশু, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে ভোগা ব্যক্তিসহ সবাইকে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ দিয়েছে আইকিউ এয়ার। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবারই সতর্ক করেছে। দূষণ ঠেকাতে যেসব আইন আছে, সেগুলো না মানার কারণে ঢাকার দূষণ দৃশ্যমান হচ্ছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে চলছে সড়ক খনন। নগরীর অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ির সময় কোনো ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। উন্মুক্ত স্থানে বালু, মাটি, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণপণ্য খোলা রাস্তায় ফেলে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ। রাজধানীতে নেওয়া মেগাপ্রকল্পগুলোর আওতায় সড়কে কাটাকাটি চলছেই। বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘিœত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানা শারীরিক জটিলতা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে, হবে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বায়ুদূষণ রোধে তৎপর হতে হবে। মানুষের উন্নত জীবনব্যাবস্থার জন্য উন্নয়নমূলক কাজের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে তার সাথে সাথে এই কথাটিও মাথায় রাখতে হবে যে, যাদের জন্য সে কাজ করা হচ্ছে, তাতে তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।