মূলত এটা জামাইদের নিয়ে মাছের মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলা। বলছিঃ- জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজার অবস্থি এক দিনের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলার কথা। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। এই দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি। পঞ্জিকা অনুসারে মঙ্গলবার পহেলা অগ্রহায়ণ হওয়ায় উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে বসে বিভিন্ন জাতের মাছের মেলা। অগ্রহায়ণ মাসে কিছুটা ঠান্ডা হলেও মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের শত ঢল। প্রায় একশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসা মেলায় নদী, দীঘি ও পুকুরে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতারা ও পাইকাররা ভিড় জমায়। এই অগ্রহায়ণ মাসে মাঠ থেকে নতুন ফসল কৃষকদের ঘরে উঠলেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন উপজেলার সকল কৃষকেরা। এই অনুষ্ঠান পালন করতে আসেন জেলা ও উপজেলায় অবস্থিত তাদের জামায়-মেয়ে ও বিয়াই-বিয়ানসহ আত্মীয়-স্বজনরা। এরজন্য উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে বসে মাছের মেলা। সেখানে প্রতিটি দোকানে সাজানো হয়েছিল বোয়াল, রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেট,বাঘাআইরসহ নানা ধরনের মাছ। সর্বোচ্চ ১৪ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে।
জানা গেছে, পঞ্জিকা অনুসারে মঙ্গলবার পহেলা অগ্রহায়ণ মাস। এই মাসের প্রথম তারিখে নতুন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত নবান্ন উৎসব। প্রতি বছরের অগ্রহায়ণ মাসের আমন ধান কাটার পর নবান্ন উৎসব আয়োজন করেন উপজেলার সকল কৃষকেরা। জেলা ও উপজেলাতে অবস্থিত তাদের জামায় ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন এই নবান্ন উৎসবে। তাদের আমন্ত্রনে ওই অনুষ্ঠান পালন করতে যোগ দিতে আসেন জামায়-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা। এই দিন যেন হয় গ্রামীন জনপদে উৎসবের আমেজ। কৃষকদের ঘরে ঘরে শুরু হয় নতুন চালের নবান্ন এবং চলে পিঠা-পুলি,পায়েস, ক্ষীর, খই ও মুড়ি। এ দিন কৃষকদের ঘরে হয় যেন এক মিলন মেলা। এই উপলক্ষে জেলার সর্ব বৃহৎ মাছের মেলা বসে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে। এই এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা আগের দিন থেকেই পাঁচশিরা বাজারে তাদের আড়ত ঘরে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন দীঘি, পুকুর, নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। এই মাছের মেলা উপলক্ষে এ দিনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর পেশাজীবি মানুষেরা উচ্চ মুল্যে ঐসব মাছগুলো ক্রয় করেন। এই বছরে মাছের মেলাতে বোয়াল, রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেট, বাঘাআইরসহ ৫ কেজি থেকে ১৪কেজি ওজনের মাছের সমাগম হয়েছে।
মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা মাছ ব্যবসায়ী মো.সাইফুল ও আবদুল লতিফ বলেন, এই মাছের মেলাতে জন্য বিভিন্ন পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়। কাতলা, রুই, মৃগেল ৭শ থেকে ৮শ টাকা কেজিতে এবং বাঘাআইর, বোয়াল ও চিতল মাছ হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৪৫০ টাকা থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ২৫০ টাকা দরে বিগহেড ও সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় মাছ কিনতে আসা মুনীশ, বোলু ও জলিল বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশী। মেয়ে-জামায়ের জন্য কাতলা, ব্রিগেট ও রুই মাছ কেনা হয়েছে।