ধারাবাহিকভাবে কমছে নতুন দক্ষ জনশক্তি রফতানির পরিমাণ। দুই বছরের ব্যবধানে প্রবাসে জনশক্তি রফতানি ৩০ শতাংশের মতো কমে গেছে। একই সঙ্গে কম গেছে পেশাজীবী এবং দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ জনশক্তি রফতানির পরিমাণও। যদিও বর্তমানে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। বিগত ২০১৮ সালে প্রবাসে ৩ লাখ ১৭ হাজার দক্ষ জনশক্তি রফতানি হলেও ২০১৯ সালের শেষে এসে ওই সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজারে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে স্বল্প দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৩ হাজার থেকে কমে ১ লাখ ৯৭ হাজারে নেমে এসেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি মাসে এদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে যেত। কিন্তু করোনার কারণে তারা যেতে পারছে না। করোনার প্রকোপ শুরুর পর গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে উলটো ১ লাখ ৯৫ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। জনশক্তি রফতানিতে এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞরা সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঠিক রাখতে নতুন বাজারে জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগ নেয়াও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালে ৪ লাখ ৩৪ হাজার দক্ষ শ্রমিক বিদেশে গেলেও ২০১৮ সালে ওই সংখ্যা কমে ৩ লাখ ১৮ হাজারে নেমে আসে। সর্বশেষ ২০১৯ তা ৩ লাখ ৪ হাজারে নেমে আসে। পেশাজীবীদের মধ্যে ২০১৭ সালে সাড়ে ৪ হাজার প্রবাসে গেলেও পরের বছরগুলোতে ২ হাজার ৬০০ এবং ১ হাজার ৯০০ নেমে আসে। ২০১৭ সালে ৪ লাখ স্বল্প দক্ষ শ্রমিক প্রবাসে গেলেও পরের বছরগুলোতে ওই সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজারে এবং ১ লাখ ৯৭ হাজারে নেমে আসে। তবে আধা-দক্ষ শ্রমিক গমন এক বছরের ব্যবধানে তুলনামূলক বেড়েছে। ২০১৭ সালে আধা-দক্ষ শ্রমিক প্ররণ ১ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ২০১৮ সালে কমে ১ লাখ ১৭ হাজার হয় এবং ২০১৯ সালে কিছুটা বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার হয়। সব মিলিয়ে প্রবাসে বিগত ২০১৭ সালে রেকর্ড ১০ লাখ জনশক্তি রফতানি হলেও পরের বছরগুলোতে ওই সংখ্যা ৭ লাখে নেমে আসে।
সূত্র আরো জানায়, গত এক দশকে দেশভিত্তিক জনশক্তি রফতানি পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোট জনশক্তি সিংহভাগ (৫৪ শতাংশ) রফতানি হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে ওই হার হ্রাস পেয়ে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। আর সৌদি আরবে ২০০৯ সালে জনশক্তি রফতানি মোট জনশক্তির মাত্র ৩ শতাংশ হলেও ২০১৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে ২০১৮ সালে তা হ্রাস পেয়ে ৩৫ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাহরাইনে ২০০৯ সালে ৬ শতাংশ জনশক্তি রফতানি হলেও ২০১৯ সালে তা হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রফতানি ২০০৯ সালের তুনলায় ২০১৯ সালে হ্রাস পেয়ে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালে বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ২২৪ জন। ২০১৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জনে দাঁড়ায়, যা আগের বছরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। অন্যদিকে ২০১৯ সালে নারী কর্মী গমনের সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ জনে নেমে আসে। যা মোট কর্মী গমনের প্রায় ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের সিংহভাগ আসে। সেক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করছে সৌদি আরব। তারপর সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের মধ্যে সৌদি আরব থেকে দেশে সর্বোচ্চ (২২ শতাংশ) রেমিট্যান্স এসেছে। তার পরের অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৩.৫৮ শতাংশ), কুয়েত (৭.৫৪ শতাংশ) এবং ওমান (৬.৭৬ শতাংশ)। পশ্চিমা ও ইউরোপিয়ান দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (১৩.২০ শতাংশ)। তারপর যুক্তরাজ্যের অবস্থান (৭.৫০ শতাংশ)। সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, অদক্ষ শ্রমিকরা যতো সহজেই বিদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে, দক্ষরা ততো সহজে পারছে না। কারণ দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর বিষয়টি অনেকটাই ‘কমপ্ল্যায়েন্স’ নির্ভর। তাছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তাদের শ্রমবাজারে যেতে হচ্ছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি তাদের আরো প্রতিযোগিতায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বিদ্যমান শ্রম বাজারগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।