বৈশ্বিক মহামারীতে থমকে গেছে রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পসহ চলমান মোট ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম প্রায় থেমেইছিল। কিছু কিছু প্রজেক্টের কাজ চলেছে লোকাল ট্রেনের মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এখনও চালু হয়নি সকল প্রজেক্টের কাজ। ৪১টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি প্রজেক্টের ১ বছর ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে পিডিদের সুযোগ -সুবিধা অথাৎ তাঁদের পোয়াবারো।
যেসব প্রকল্পের সময় বেড়েছে সেগুলো হলো-খুলনা হতে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প,আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন, ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ মিটারগেজ সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ,যাত্রীবহনে মিটারগেজ ও ব্রটগেজ সংগ্রহ প্রকল্প,
লোকোমোটিভ,রিলিফ ক্রেন এবং লোকো মোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ, ২০০টি মিটারগেজ কোচ ক্রয় প্রকল্প,বিশদ নকশা প্রণয়ন ও দরপত্র দলিল প্রস্তুতসহ ভাংঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য,ঢাকা টু চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা হয়ে লাকসাম দ্রুত গতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন প্রজেক্ট,ঢাকার শহরের চারিদিকে বৃত্তাকারে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম,চট্টগ্রাম পতেঙ্গায় বে-টার্মিনালে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন প্রকল্প,খুলনা থেকে দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল রেললাইন নির্মাণ,রেলওয়ের ৫৭৫ কিঃমিঃ সেকেন্ডারী লাইনে অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং চালু করা প্রজেক্ট, সুনামগঞ্জ জেলা সদরে রেলওয়ে সংযোগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন মেয়াদ বাড়ানো শেষ প্রকল্প ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরী সহায়তা প্রজেক্ট।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অথনীতিবিদ প্রকৌশলী এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন,১৪টি প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধি পেলেও অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
রেলের উন্নয়নে প্রথম প্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রাম। প্রজেক্টের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের ১ জুলাই। এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন মো.মিজানুর রহমান। সর্বশেষ ৪১ ন-ং রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (কারিগরি সহায়তা) প্রকল্প। এই কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২১সালের ৩০ জুন। বিভিন্ন সময়ে এ সব প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
এর মধ্যে ৪ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে মংলা হতে খুলনা প্রকল্পের। এর ফলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয় ২০১০ সালে। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪ দফা সময় বাড়িয়ে ১০ বছরেও চলমান রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে । সময় বৃদ্ধির ফলে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১২১ শতাংশ।
বিগত সময়ে প্রকল্প পরিচালকদের গাফিলতির কারণে প্রজেক্টের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যত বড় প্রকল্প, তত বেশি দুর্নীতি। প্রকল্প যত বিলম্বিত হয়, খরচও ততই বাড়তে থাকে। আর সেই সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এবং লুটপাটের সুযোগ বাড়ানোর জন্য প্রকল্প ঝুলিয়ে রাখা হয় দিনের পর দিন। যতদিন প্রকল্প আছে ততদিন আছেন প্রকল্প পরিচালক, বিদেশ সফর, সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার আর প্রকল্পের জন্য নানা ধরণের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ কেনা বাবদ বরাদ্দ হওয়া কোটি কোটি টাকা নয়-ছয় করে নিজের আখের গোছানোর দিকেই মনোযোগ বেশি দেন। এমন চিত্র একেবারে সাধারণ বিষয় দেশের রেলখাতে।
প্রকল্পের মাধ্যমে কেনা-কাটা, সেতু নির্মাণ, নিয়োগ, যাত্রীসেবা, ট্রেন ও রেললাইন দেখভালসহ সব ক্ষেত্রেই চলছে অনিয়ম। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সুফল আসেনি রেলে। বিশ্বের প্রায় সর্বত্র যেখানে রেলব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে, সেখানে আমাদের দেশে রেল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ট্রেনের গতি ১০০ তো দূরের কথা, গতিবেগ ৬০ কিলোমিটারের উপরেই তোলা যায় না।