দেশে কর্মরত ব্যাংকবহির্ভূত অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১টিই রেড জোনে বা সবচেয়ে খারাপ অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া ইয়েলো জোনে বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠান। আর গ্রিন বা ভালো অবস্থায় রয়েছে মাত্র ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আগে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান রেড জোনে ছিল। এবার আরো একটি প্রতিষ্ঠান যোগ হয়েছে। আর ইয়েলো জোনে আগে ছিল ১৯টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এবার একটি কমে ১৮টিতে দাঁড়য়েছে। তবে গ্রিন জোনে আগের মতো এবারও ৪টি প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। অর্থাৎ ইয়েলো জোন থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে রেড জোনে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চাপ সহনশীল (স্ট্রেস টেস্টিং) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন জোনে ফেলেছে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি, ঋণঝুঁকি, সম্পত্তির (ইকুইটি) মূল্যজনিত ঝুঁকি ও তারল্যের অবস্থা- এই চার ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া হয়। ইতিমধ্যে রেড জোনে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড়ভাবে তদারকি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক চাপ সহনশীল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রিন, ইয়েলো ও রেড- ওই তিন জোনে ভাগ করে থাকে। রেড জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমেটড, বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (বিএফআইসি), বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (ফাস), ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইসলামিক ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, রিলায়েন্স ফিন্যান্সসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
সূত্র আরো জানায়, নিয়মানুযায়ী রেড জোনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন বছরের মূলধন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ বহুমুখীকরণ, শেয়ারে বিনিয়োগ ও আপৎকালীন তারল্য পরিকল্পনাও জমা দিতে হয়। ইয়েলো জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একইভাবে তদারকি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর গ্রিন জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সূচকে অবনতি ঘটলে কঠোরভাবে তদারকি করা হয়। তবে ওই জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো বলেই ধরা হয়।
এদিকে গত জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। তার মধ্যে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর তা থেকে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৮৩ দশমিক ১২ শতাংশই খেলাপি। পিপলস লিজিংয়ের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে সিংহভাই খেলাপি। প্রতিষ্ঠানটিকে অবসায়ন করার প্রক্রিয়া চলছিল। এখন আবার সেটিকে অবসায়ন না করে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ চলছে। আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সেটিকেও পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকাই খেলাপি।