সময়ের আবর্তনে এবং নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে পাবনার সুজানগরের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় মৃতশিল্প এখন মৃতপ্রিয়। দিনের পর দিন ওই শিল্প এজনপদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ একসময় জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে সুজানগরের তৈরী নানা রকমের বাহারি মৃতশিল্পের অত্যন্ত চাহিদা ছিল।
উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই জানান, গত ১০/১২ বছর আগেও উপজেলার মানিকদীর পালপাড়া, হেমরাজপুর, সাতবাড়ীয়া, মানিকহাট, রাইপুর, সাগরকান্দী এবং শ্যামগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামে মৃতশিল্পের বাহারি বাসন-কোসন তৈরী করা হতো। সে সময় ওই সব গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মৃতশিল্পের তৈরী বাহারি হাড়ি, পাতিল, থালা, বদনা, গামলা, কলসি, পেয়ালা, পুতুল এবং দই তৈরীর সড়াসহ বিভিন্ন বাসন-কোসন তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী তৈজসপত্র মাটির তৈরী তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নেওয়ার কারণে মৃতশিল্পীরা তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে অল্প সংখ্যক মৃতশিল্পী তাদের পৈতৃক পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। উপজেলার মানিকদীর পালপাড়া গ্রামের মৃতশিল্পী সঞ্জয় পাল জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী তৈজসপত্রের দাম বেশি হলেও মাটির তৈরী তৈজসপত্রের চেয়ে বেশি টেকসই। সে কারণে অধিকাংশ মানুষ মাটির তৈরী তৈজসপত্রের পরিবর্তে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী তৈজসপত্র কেনায় মৃতশিল্পের কদর কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের পৈতৃক পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলার হেমরাজপুর গ্রামের রাজন পাল বলেন বর্তমানে উপজেলায় মাটির তৈরী স্যানিটারী কূপ চাকা, হাড়ি, গামলা, কলসি ও দই তৈরীর সড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা না থাকার কারণে চাহিদা মোতাবেক তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না। সেকারণে পরিবারপরিজন নিয়ে তাদের কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে ঐতিহ্যবাহী ওই শিল্প পুনরায় প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে ভুক্তভোগী মৃতশিল্পীরা জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী বলেন মৃতশিল্পীদের সরকারি সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।