শ্যামনগর উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” নামীয় ক্লিনিকে এক নবজাতকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘নরমাল’ ডেলিভারীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দালালের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে ক্লিনিকের পরিচালক জনৈকা রেহেনা পারভীন নিজে সন্তান ভুমিষ্ঠ করার সময় শিশুটি মারা যায় বলে অভিযোগ পরিবারের।
গত ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে শ্যামনগর উপজেলা সদরের নকিপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন হাসপাতাল সড়কের পাশে গড়ে ওঠা “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্নার” নামীয় ক্লিনিকে ঘটনাটি ঘটেছে।
শিশুটির মুত্যর পরপরই ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে রেহেনা পারভীনসহ ঐ ক্লিনিকের লোকজন গা-ঢাকা দিলেও বুধবার থেকে ক্লিনিকটি আবারও খুলে দেয়া হয়। যদিও ক্লিনিক কতৃপক্ষ দায় অস্বীকার করে জানিয়েছে প্রসব হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে শিশুটির মৃত্যু হয়।
শ্যামনগর উপজেলার আবাদচন্ডিপুর গ্রামের মাওলানা সাহাবুদ্দীন ইসলাম জানান তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী কেয়া পারভীনকে গত ২০ নভেম্বর শ্যামনগরের “মেডিকেল সাইন্স ল্যাব” এ নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এ সময় ডাঃ এস আর এন তারিন পরীক্ষা শেষে বাচ্চা সুস্থ রয়েছে এবং ‘নরমাল’ ডিলভারী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে-জানিয়ে একই ভবনের নিচ তলায় গড়ে উঠা “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” এ নিয়ে ভুমিষ্ট করার পরামর্শ দেন।
মাওলানা সাহাবুদ্দীন আরও জানান, গত ২৪ নভেম্বর তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে সন্ধ্যার পর ওই ক্লিনিকের এক দালালের জোরাজুরিতে রোগীকে “প্রেগন্যান্ট কেযার কর্ণার” এ নেয়া হয়। সারা রাত পর্যবেক্ষনে রাখার পর একপর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকার চুক্তিতে ভোর ছয়টার দিকে এমবিবিএস গাইনী চিকিৎসক পরিচয়দানকারী রেহেনা পারভীন নিজে সন্তান ভুমি করতে যেয়ে শিশুকে মেরে ফেলেন।
ভুমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মৃত্যু হওয়া শিশুটি সাহাবুদ্দীন ও কেয়া দম্পতির প্রথম সন্তান বলে জানান সদ্য সন্তানহারা কেয়া পারভীন। তিনি তার প্রথম সন্তানের এমন মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
ওই ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেয়ার বিষয়ে ডাঃ তারিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে “মেডিকেল সাইন্স ল্যাাব” এর পরিচালক পারভেজ হায়দার চিকিৎসক তারিনের দায়িত্ব নিয়ে জানান শিশু সুস্থ রয়েছে জানিয়ে রোগীকে নিরাপদ কোন স্থানে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সুনির্দিষ্ট করে “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” এর কথা বলা হয়নি। তার প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্র রয়েছে জানিয়ে তিনি পুনরায় তার প্রতিষ্ঠানের কোন চিকিৎসকের বক্তব্য নেযার চেষ্টা হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
অন্যতম অভিযুক্ত রেহেনা পারভীন জানান, আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাজ করায় আমার নুতন করে সনদের দরকার পড়ে না। তার প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন লাগে না-উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আামার মেয়ে স্বাস্থ্য সহকারী কোর্স সম্পন্ন করায় তার পরিচালনায় “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” গড়ে তুলেছি। তিনি আরও বলেন, বার বার বলার পরও প্রসূতি নারীকে অন্য কোথাও না নিয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে আমরা সন্তান প্রসবের চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেরা রোগীর চিকিৎসা শুরু করার অগেই শিশুটির মৃত্যু হয় বলেও তিনি দাবি করেন।
মাওলানা সাহাবুদ্দীনের শ^াশুড়ি জানান তিন দিন আগে আলট্রাসনোগ্রাম করতে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কর্তব্যরতরা একই ভবনের নিচ তলায় গড়ে ওঠা “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” এ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ ক্লিনিকের পরিচালক রেহেনা পারভীন বার বার ফোন দিয়ে তাদের কাছে বাচ্চা ভুমিষ্ঠ করানোর দাবি করতো। তিনি আরও বলেন, শিশুটির মৃত্যুর পর তারা বিষয়টি নিয়ে লোক জানাজানি করলে তা আইন আদালত করলে দাফন করা ঐ শিশুকে কবর থেকে তুলে কাটা ছেড়া করা হবে বলে তাদেরকে ভয় দেখানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে ইতঃপূর্বে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হিসেবে সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী রেহেনা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে ‘নরমাল’ ও ‘সিজারিয়ান’ ডেলিভারীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বৈধ-অবৈধ অসংখ্য সন্তান এ্যাবোরশনের কাজ তার প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ বলেও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে তার মেয়ে খাদিজাতুল কোবরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য সহকারীর পড়ালেখা সম্পন্ন করার পর ক্লিনিকের সামনে তার নামেও একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা সহায়তার নামে এমন অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে রেহানা পারভীন তার এ ক্লিনিক ব্যবসা পরিচালনা করলেও কখনও কেউ এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য পর্যন্ত করে না।
অভিযোগ শুরুতে হায়বাদপুরের নিজ বাড়িতে এ ধরনের কার্যক্রম চালালেও ব্যবসায় গতি আনতে যেয়ে গত কয়েক মাস ধরে নকিপুর বাজারের চৌরাস্তায় জমজমাট ক্লিনিক ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি।
ঘাতক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়ার বিষয়ে ডাঃ তারিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে “মেডিকেল সাইন্স ল্যাাব” এর পরিচালক পারভেজ হায়দার চিকিৎসক তারিনের দায়িত্ব নিয়ে জানান শিশু সুস্থ রয়েছে জানিয়ে রোগীকে নিরাপদ কোন স্থানে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সুনির্দিষ্ট করে “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” এর কথা বলা হয়নি। তার প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্র রয়েছে জানিয়ে তিনি পুনরায় তার প্রতিষ্ঠানের কোন চিকিৎসকের বক্তব্য নেযার চেষ্টা হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
প্রধান অভিযুক্ত রেহেনা পারভীন জানান, আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাজ করায় আমার নুতন করে সনদের দরকার পড়ে না। তার প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন লাগে না-উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আামার মেয়েও হেলথ এ্যাসিসট্যান্ট পাশ করেছে তাই আমরা অসহায় মানুষের সেবা দিতে “প্রেগন্যান্ট কেয়ার কর্ণার” পরিচালনা করছি। একাধিক সাংবাদিক এসে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরির্দশন করে গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বার বার বলার পরও প্রসূতি নারীকে অন্য কোথাও না নিয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে আমরা সন্তান প্রসবের চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেরা রোগীর চিকিৎসা শুরু করার অগেই শিশুটির মৃত্যু হয় বলেও তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য শ্যামনগরে ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। চিকিৎসা দেয়ার পরিবর্তে তারা অসুস্থতাকে পুঁজি করে রোগীদের গলা কাটছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শীর্ষ কর্তাদের নাকের ডগায় এমন কর্মকা- লাগাতার চললেও অজ্ঞাত কারণে তারাও নীরবতা পালন করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।