দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব চলছে। নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও কর্তৃপক্ষ তা রোধে হিমশিম খাচ্ছে। কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও বিজিবি গত ১৫ দিনে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ৮টি লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত ও ৬ কোটি টাকার পণ্য চালান আটক করেছে। তারপরও থেমে নেই রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা। বেনাপোল স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল কাস্টমস হাউসের জন্য চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু রাজস্ব ফাঁকিবাজ অসাধু চক্র রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ চকোলেটের চালানে উন্নতমানের শাড়ি, ব্লিচিং পাউডারের চালানে কফি ও ওষুধ, অ্যালুমিনিয়াম ইনগটের মধ্যে ভারতীয় থ্রিপিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি, থানকাপড়, ফলস কাপড়, খালি ব্লাড ব্যাগ, মেশিনারি পার্টসের ভেতরে প্যাডলক ও রেক্সিন আনা হয়। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ যা আটক করেছে। তাছাড়া ঘোষণাতিরিক্ত ১৯ টন মাছও আটক করা হয়। ওসব চালান থেকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি রোধে ঝটিকা অভিযানও শুরু করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বেড়েই চলছে। কখনো কাস্টমস বন্দরকে ম্যানেজ করে, আবার কখনো বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। মাঝে মধ্যে দু-একটি চালান আটক হলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় সাময়িক স্থগিত সিএন্ডএফ লাইসেন্সগুলো হচ্ছে রিমু এন্টারপ্রাইজ, তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, এশিয়া এন্টাপ্রাইজ, সানি ইন্টারন্যাশনাল, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, মুক্তি এন্টারপ্রাইজ, রিয়াংকা এন্টারপ্রাইজ ও ট্রিম ট্রেড। ওসব লাইসেন্সের অধিকাংশই ভাড়ায় খাটানো হয় বলে জানা গেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকি দেয় বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিড এন্টারপ্রাইজ, এলটেক এ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রি ও শার্শার বাগআঁচড়া বাজারের মেসার্স সোনালি ট্রেডিং।
এদিকে সাধারণ সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলেছেন, এক একটি ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ার পর নিত্য নতুন আইন করে সিএন্ডএফ এজেন্টদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ যারা সব সময় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য চালান খালাস নিয়ে যাচ্ছে তাদের লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার পর তারা আবারো অন্য লাইসেন্স ব্যবহার করে একইভাবে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, শুল্ক ফাঁকির ঘটনা দুঃখজনক। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে অনেক প্রতিষ্ঠানের সিএ্যান্ডএফ লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় যে সব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে তাদের সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত ও শোকজের পরে বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াফত করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস হাউস জিরো টলারেন্স ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বন্দরে রাতে কাস্টমসের একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। শুল্ক ফাঁকিসহ যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।