গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের তেমন সুবিধা পাচ্ছে না ভূমিহীনরা। কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মুখ থুবরে পড়েছে প্রকল্প দু’টিতে। তদারকির অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম নামে দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।কিন্তু কৌশলে প্রকল্প দু’টি এমন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে যে, সেখানে থাকার মত কোন পরিবেশ নেই।বিশেষ করে প্রকল্প গুলিতে রাখা হয়নি কোন কবর স্থান।নাই কোন রাস্তা ও সুপ্রীয় পানির ব্যবস্থা।
গোবিন্দগঞ্জের প্রায় ২০টি স্থানে নির্মিত প্রকল্প দু’টির সবগুলোই নদীর ধারে অবস্থিত। নির্মিত ঘরগুলো নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করার কারণে ব্যবহার না হতেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের ঘরগুলো যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা সেখানে যেতে অনিচ্ছুক। বসবাসরত একাধিক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান, ঘরগুলো এখনই ধ্বসে পড়ছে। নদীর ধারে হওয়ায় সেখানে বসবাসের মতো অবস্থা নেই।প্রকল্প দুটি থেকে ২০৭টি ঘর হস্তান্তর করা হলেও সেখানে গুটিকয়েক পরিবার বসবাস করছে। বাকীরা এখনো সেখানে আসেনি। একই ইউনিয়নের ফকিরগঞ্জ ১২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এখানে ২০ থেকে ২৫টির মতো পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়া বেতারা গ্রামে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ৭০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ৪০টি পরিবার বসবাস করছে। দরবস্ত ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গোবিন্দপুর গ্রামে আশ্রয়ণের ৩০টি গোসাইপুর গ্রামে গুচ্ছগ্রামের ৩০টি ঘর নির্মাণ করে সবগুলো হস্তান্তর করা হলেও সেখানে মাত্র কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। এরপরও হরিলুটের ধান্দায় আবারো নতুন করে গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যা চলমান রয়েছে। হরিরামপুর ইউনিয়নের ধুন্দিয়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘরের মধ্যে ৪০টি হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানেও একই চিত্র। মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পান্থামারী গ্রামে আশ্রয়ণের ৬০টি ও বালুয়া গ্রামে ১২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফুলবাড়ি ইউনিয়নের খানসাপাড়ায় আশ্রয়ণের ১১০টি ঘর নির্মাণ করে ৬০টি হস্তান্তর করা হয়েছে। রাখালবুরুজ ইউনিয়নের পার সোনাইডাঙ্গা আশ্রয়ণের ১২০টি ঘর নির্মাণ হলেও মাত্র কয়েকটি পরিবারকে সেখানে বসবাস করতে দেখা গেছে। সাপমারা ইউনিয়নে দুধিয়া আশ্রয়ণের ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে সবগুলো ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। চক রহিমাপুর গুচ্ছগ্রামে ১৩০টি ঘরের মধ্যে ৪০টিপরিবারকে সেখানে বসবাস করতে দেখা গেছে। তালুককানুপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর ও তাজপুর গুচ্ছগ্রামের ২২০টি ঘরের মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ ঘর অব্যবহৃত রয়েছে।সাপমারা ইউনিয়নের নরেঙ্গাবাদ গুচ্ছগ্রামের ৬০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। হরিরামপুর ইউনিয়নের ধুন্দিয়া গুচ্ছগ্রামের ১০০টি, রাখালবুরুজ গুচ্ছগ্রামের ৬০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাটাবাড়ি ইউনিয়নের ফুলহার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ শেষে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের প্রকল্পগুলো সবগুলোই অনুপযুক্ত জায়গায় নির্মিত হওয়ায় সরকারের শুধু অর্থ ব্যয়ই হচ্ছে। সাধারণ ভুমিহীনরা এর কোন সুফল পাচ্ছে না। শুধু প্রকল্পের সাথে জড়িতরাই নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে নিজেরাই আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন সেনাবাহিনী আর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি একটি কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে যার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন পরিষদ খাস জমি নির্বাচন করে তার বিপরীতে ভূমিহীন দেখিয়ে প্রকল্প পাঠায় সেটি ভূমি অফিস যাচাই-বাছাই করেন।