বেসরকারি খাতের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিদ্যুতের হাজার হাজার কোটি টাকার বকেয়া বিল অনাদায়ী রয়েছে। বেসরকারি খাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। বকেয়া বিলের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া বিলের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে কম ওজোপাডিকোর, ৪৪৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তাছাড়া বাবিউবো বকেয়া ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা, ডিপিডিসির বকেয়া ১ হাজার ১২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ডেসকোর বকেয়া ৭৫২ কোটি টাকা এবং নেসকোর বকেয়া ৬৮৬ কোটি টাকা। অতিসম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বকেয়া বিলের একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রদত্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ৭৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সরকারি খাতের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা সবচেয়ে বেশি, ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাছাড়া আধাসরকারি খাতের কাছে বকেয়া ১৯৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, সরকারি বকেয়া বিলের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বকেয়া বিল অনাদায়ী রয়েছে। আসলে বিদ্যুৎ বিলের টাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করে। অথচ বকেয়া বিলের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়লে জনগণের উন্নয়নেই যে ব্যবহার হয় তা তারা বুঝতে চায় না। সংসদীয় কমিটি বিদ্যুতের বকেয়া এবং সিস্টেম লস কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। সেজন্য বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার দ্রুত স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া জনগণের সেবা প্রাপ্তি সহজ করার পাশাপাশি হয়রানি রোধেও মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া সংসদীয় কমিটি প্রকল্পের অপচয় রোধ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুপারিশ করে।
সূত্র আরো জানায়, প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুতের অপচয় এবং চুরি দুটোই কম হয়। বিল বকেয়া থাকার বিষয়টিও থাকে না। সেজন্য দ্রুত প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে বলা হয়েছে। একসময় বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ২৬০০ কোটি টাকা। এখন পাওয়া গেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। তার বাইরে উন্নয়ন সহযোগীদেরও বরাদ্দ রয়েছে। বড় প্রকল্পে যাতে বড় অপচয় না হয় সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিন সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার জানান, বকেয়া বিল আদায়ে আইনি যা যা পদক্ষেপ আছে তা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে বলা হয়েছে সচিব কমিটির বৈঠকে যেন সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।