চলছে শীতকাল, আর শীতকাল মানেই চারদিকে ঠান্ডা আবহাওয়া। বাংলাদেশ হলো ছয় ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা,......শীতকাল। তন্মধ্যে শীতকাল অন্যতম। পৌষ ও মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল। আমাদের দেশে ডিসেম্বরের শেষদিকে ঠান্ডা নিয়ে আগমন হয় শীতের। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কনকনে শীতকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করার।
শীতের আমেজের পাশাপাশি যে বিষয়টা জনমহলে আনন্দময় হয়ে ওঠে সেটা হলো পিঠার আমেজ। শীত মানেই চারদিকে পিঠা-পুলির উৎসব। শীতকালে নানা রকম পিঠা দেখা যায়। এদর মধ্যে বহুল জনপ্রিয় পিঠা হলো- চিতই পিঠা এবং ভাপাঁ পিঠা। বাকি পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্ষীরপুলি, চন্দ্রপুলি, পোয়া পিঠা, ভাপা পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, আস্কে পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, সুন্দরী পাকন, সর ভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, লবঙ্গ লতিকা, নকশি পিঠা ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো নানান ধরনের পিঠা রয়েছে। তবে এগুলো যে মানুষ কম পছন্দ করে তা না; শীত মানেই পছন্দের খাবারের তালিকায় হরেক রকমের পিঠার নাম। তবে রাস্তাঘাটে যে পিঠার আমেজ বেশি দেখা যায় তা হলো চিতই পিঠা এবং ভাপাঁ পিঠা, সাথে রয়েছে তেলের পিঠা। কারণ এসকল পিঠার দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এবং স্বাদের কারণে এ পিঠা অনেকেরই আকর্ষণের কারণ।
সবথেকে আকর্ষণের বিষয় হলো- চিতই পিঠার সাথে খাওয়ার জন্য থাকে বাহারী রকমের ভর্তা। যেমনঃ শুটঁকি ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, সরিষা ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা আরো নানা রকম ভর্তা। মূলত এই হরেক রকমের ভর্তাগুলোই পিঠার স্বাদকে আরো রোমাঞ্চিত করে।
রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে বিকাল হলেই শুরু হয়ে যায় পিঠা বিক্রির উৎসব। এখানে স্বল্পপুজিঁর মানুষেরা বিকাল হলেই তাদের স্বল্প সময়ের ঠিকানায় চলে আসে। এবং তাদের নিত্যদিনের কর্ম শুরু করে। তাদের সবার পুজিঁ তাদের সাধ্যের মধেই থাকে।
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলাম। সাথে ছিলেন সহকর্মী ভাই অভিসিৎ সেন। দিনটি ছিল রোজ শনিবার ৩০শে জানুয়ারী (১৬ মাঘ, ১৪২৭)। হাটঁতে হাটঁতে ভাবলাম পিঠা খাওয়া যাক।
হালিম: ভাই (অভিজিৎ সেন) চলেন পিঠা খাই।
অভিজিৎ: চলেন।
তারপর আমরা হাটঁতে হাটঁতে চলে আসলাম আইডিয়াল স্কুল এ- কলেজ (মতিঝিল) গেইটের সামনে। প্রথমে আমরা খেলাম চিতই পিঠা। পিঠার সাথে খেলাম শুটকি ভর্তা এবং ধনেপাতা ভর্তা। চিতই পিঠা খাওয়া শেষ করে আরেকটু সামনে গেলাম ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য। পিঠা খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এ নিয়ে প্রতিবেদন করব।
ভাইকে বললাম কয়েকটি ছবি তুলে দিতে, তিনি কয়েকটি ছবি তুলে দিলেন। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটি তারই তোলা। এজন্য তাকে (ভাই) আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
ওহ! একটা বিষয় বলতে ভুলেই গেলাম, পিঠা খেতে খেতে পিঠা বিক্রেতার সাথে আমাদের কিছু কথপকোথন হয় তা নিচে তুলে ধরা হলো:
অভিজিৎ : কাকা আপনার নাম কি?
পিঠা বিক্রেতা: মো. কবির।
অভিজিৎ : আপনি কেমন আছেন?
পিঠা বিক্রেতা: ভালোই আছি।
হালিম : কাকা আপনার পবিারের সদস্য সংখ্যা কয়জন?
পিঠা বিক্রেতা: ৫ জন। মা, বউ আর তিন ছেলেমেয়ে।
হালিম : কাকা আপনি কোথায় থাকেন?
পিঠা বিক্রেতা: আহম্মদবাগ (রাজধানী)।
অভিজিৎ : দিনে কত টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারেন?
পিঠা বিক্রেতা: এই ধরেন ১৫’শ/২’হাজারের মতো।
অভিজিৎ : খরচ কত পড়ে?
পিঠা বিক্রেতা: চাল, চিনি, অন্যান্য জিনিস কিনতে ১২’শ টাকা চলে যায়। লাভ থাকে ৩০০ টাকা মতো।
অভিজিৎ : ৩০০ টাকা দিয়ে আপনার ভালোভাবে চলে?
পিঠা বিক্রেতা: আল্লাহর রহমতে ভালোই চলে। বউ পরিবার নিয়ে চলতে পারি।
হালিম : আপনি কি এখানে শুধু শীতকালেই বসেন?
পিঠা বিক্রেতা: না, এখানে আমি সারাবছরই বসি।
অভিজিৎ : শীত বাদে পিঠা কেমন চলে?
পিঠা বিক্রেতা: ভালোই চলে তবে শীতের মতো না। শীতে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা আর তেলের পিঠা বেচি। শীত বাদে ভাপা পিঠা খুব বেশি বেচি না।
অভিজিৎ : ঠিক আছে কাকা, ভালো থাকবেন।