দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। নোট বই-গাইড বই নিয়ে বহু কথা হয়েছে; কিন্তু সেসব বন্ধ করা যায়নি। বিদ্যালয়ে বা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান না করে প্রাইভেট টিউশনিতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়, এমন অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁসের প্রকোপ কিছুটা কমলেও এখনো তা বন্ধ করা যায়নি। এমন অনাকাক্সিক্ষত অনেক কিছুই এখনো ঘটছে আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে, যেগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সরকার ‘শিক্ষা আইন ২০২০’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। শিগগিরই তা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন আইনে সব ধরনের নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করা হবে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদ- বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। এতে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও এর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর দেওয়া থাকবে না। আর শিক্ষার্থীদের এই সহায়ক বই কিনতে বা পড়তে কোনোভাবেই বাধ্য করা যাবে না। তেমন কিছু করা হলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। শিক্ষকরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং চালাতে কোনো বাধা নেই। কোচিং চালানোর জন্য নিবন্ধনসহ বেশ কিছু নিয়ম-নীতি থাকবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালে কোচিংয়ে যেতে পারবে না। কোনো শিক্ষক কোনোভাবেই নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তিও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের এসব বিধান লঙ্ঘন করা হলে তা শাস্তিযোগ্য হবে। ২০১১ সাল থেকে আইনের খসড়া তৈরির কাজ চলে আসছিল। এর আগে একাধিকবার মতামত নেওয়া হয়েছে। একবার মন্ত্রিসভায়ও উপস্থাপন করা হয়েছিল; কিন্তু নানা অসংগতির কারণে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এবারের খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই আইনে পরিণত হবে।
শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করাও জরুরি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতি ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছিল। কিন্তু সেই শিক্ষানীতির অনেক কিছুই এখনো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। শিক্ষা জাতির মেরুদ-- এটি শুধু কথার কথা নয়। শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন কখনো অর্থবহ হবে না। শিক্ষা আইন ২০২০ দ্রুত প্রণয়ন করা হোক এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হোক।