যে সব বীর সন্তানেরা তাদের মাতৃভাষার মান রাখতে বাহান্ন’র ২১ শে ফেব্রুয়ারী নিজেদের বুকের তাজারক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিলেন, দু:খজনক ও লজ্জাজনক হলেও সত্য সেই সব বীর শহীদদের ও ভাষা সৈনিকদের জাতীয়ভাবে নামের তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। যদিও মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত নামের তালিকা থাকলেও স্বাধীনতার ভিত্তি রচনাকারী ভাষা আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টদের নামের কোন তালিকা নেই। তবে ভাষা সৈনিকদের নামে সড়কের নামকরণ করা হলেও, তা যথাযথ প্রচারের অভাবে অনেকেই জানেন না। ফলে ঠিকানায় সেসব নাম ব্যবহার করা হয় না। অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন ভাষা সৈনিকদের নামে এসব নামকরণ করেছে ২০০৮ সালে। শে^ত পাথরে খোদাই করে লিখা রাস্তার মুখে ভাষা সৈনিকদের নামফলক থাকলেও কোন বাড়ি বা অফিসের ঠিকানায় নামগুলো লিখা হয় না। অন্যদিকে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলে সড়কের ও বাড়ি নম্বর লিখা হলেও ভাষা সৈনিকদের নাম লিখা হয় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনের আওতাধীন ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক স্থানীয়ভাবে ধানমন্ডি-৯ ও ১০ নম্বর সড়ক নামে পরিচিত। ধানমন্ডি-৮ নম্বর সড়কের নামে ভাষা সৈনিক গাজীউল হক সড়ক। ধানমন্ডি-৭ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক এম.এ. মতিন সড়ক। আর ধানমন্ডি-৬ নম্বর সড়ক আবুল কালাম শামসুদ্দিন সড়ক। ধানমন্ডি-৫ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক আব্দুর রশিদ তর্কবাগিস সড়ক। ধানমন্ডি-৪ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক অলি আহাদ সড়ক। ধানমন্ডি-৩ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক। ধানমন্ডি-৯ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক ভাষা সৈনিক তোয়াহা সড়ক। ধানমন্ডি-১ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সড়ক। ধানমন্ডি-১৫ নম্বর সড়কের নাম বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী সড়ক। ধানমন্ডি-১২ নম্বর সড়ক অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ সড়ক, ধানমন্ডি-১৩ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক অধ্যাপক সাফিয়া খাতুন সড়ক। ধানমন্ডি-৫/এ নম্বর সড়ক ভাষা সৈনিক কামরুদ্দীন আহমদ সড়ক এবং ধানমন্ডি-৪/এ সড়ক ভাষা সৈনিক শওকত আলী সড়ক নামে নামকরণ করা হয়। অথচ প্রচারনার অভাবে, দায়িত্বহীনতা ও সচেতনার অভাবে বিষয়টি সবার অজানাই রয়ে গেছে।
এছাড়া ভাষাশহীদ হিসেবে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর প্রমুখের নাম সবার জানা থাকলেও তাদের নামে কোন সড়ক বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এছাড়া ২১ শে প্রথম কবিতা রচয়িতা মাহবুব আলম চৌধুরী ও গান রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর নামেও কোন কিছু নেই।
যে ভাষা আন্দোলনের জন্য আমরা নিজেরা গর্ব করে বলি সারা বিশে^ ভাষার জন্য প্রাণ এক মাত্রা বাঙালিরা দিয়েছে। প্রাণ বিসর্জন দেয়া সেই দিনটি আজ সারা বিশে^ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত। সেই দিনের শহীদদের স্বরণে সড়কগুলোর নামকরণ করা হলেও তা ব্যবহারে অনীহা আমাদের দীনতাকেই প্রকাশ করে। আমরা মনে করি আমাদের সচেতনা বৃদ্ধি করে ভাষা শহীদদের নামকরন করা সড়কের নাম ব্যবহার করবো। সেই সাথে দীর্ঘদিন নামফলকে যতœ না নেয়ায় সেগুলো ধুলোতে ঢেকে গেছে সেগুলো পরিষ্কার করে যথাযথ প্রচারনার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সাথে ভাষা শহীদদের নামে সড়ক বা প্রতিষ্ঠান গড়ে আমাদের ভাষার ঋণ শোধ করতে হবে।