বিকল্প পথে আয় বাড়াতে চাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সেজন্য বিমানের যানবাহন বিভাগের মেরামত কারখানা ও প্রিন্টিং বিভাগকে বেসরকারি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত বছর ২৪ মার্চের পর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় বেশ কয়েকটি গন্তব্যের ফ্লাইট চালু করা হয়। কিন্তু ভিসা জটিলতা ও বিভিন্ন দেশের নানা বিধি-নিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলো থেকে সংস্থাটি আশানুরূপ আয় করতে পারছে না। এমন অবস্থায় সংস্থাটি আয়ের বিকল্প উৎস তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ওই লক্ষ্যের ধারাবাহিকতায় বিমানের যানবাহন বিভাগের মেরামত কারখানা ও প্রিন্টিং বিভাগকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানের যানবাহন বিভাগের মেরামত কারখানায় প্রশিক্ষিত জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে উন্নতমানের সেবা দেয়া সম্ভব। সেজন্যই বিমানের নিজস্ব ইউনিটে ব্যবহৃত যানবাহন মেরামতের পরও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার যানবাহনের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে যে কোনো সরকারি দপ্তর জিটুজি পদ্ধতিতে ওই সেবা গ্রহণের সুযোগ নিতে পারবে। পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগকেও (বিমান প্রেস) বাণিজ্যিক সেবা কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। বিমান প্রেসে থাকা প্রশিক্ষিত জনবল ও জার্মানির হাইডেলবার্গ কোম্পানির প্রিন্টিং মেশিন, পোলার পেপার কাটিং মেশিন, প্লেট মেকিং মেশিন ও ডাই কাটিং মেশিন রয়েছে। তাছাড়া বিমানের ফার্মগেটে অবস্থিত প্রেসে গ্লু, ম্যাট ও স্পট লেমিনেশন মেশিন; ডিজিটাল, প্যানা, পিভিসি প্রিন্টিং মেশিন রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই প্রেসের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। যার ফলে বিমান প্রেস থেকে এখন যে কোনো গ্রাহক সাশ্রয়ী মূল্যে বাণিজ্যিক সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যানবাহন বিভাগ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সেবা কার্যক্রম চালুর বিষয়টি উল্লেখ করে গত ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠায়। তার আগে গত ১৮ জানুয়ারি যানবাহন বিভাগ থেকে বাণিজ্যিক সেবা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০ জানুয়ারি থেকে বিমানের নিজস্ব গাড়ির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার যানবাহনের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেয়া হবে। চিঠিতে গাড়ি মেরামতের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে একটি মূল্যতালিকাও সংযুক্ত করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত ২৪ মার্চ থেকে সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে ১ জুন থেকে সংস্থাটি সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়। যদিও বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধের কারণে যাত্রী কম থাকায় আগের তুলনায় খুবই সীমিতসংখ্যক ফ্লাইট চালু করেছে বিমান।
এদিকে অতিসম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগের (বিমান প্রেস) বাণিজ্যিক সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জানান, সারা বিশ্বে কভিড-১৯ অতিমারীর কারণে এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বের সব এয়ারলাইনস কোম্পানি বর্তমানে একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিমানও তার ব্যতিক্রম নয়। সেজন্যই বিমানের অপারেশনাল ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিমানের আয় বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বিমানের সব সম্পদের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিমান প্রেসে সম্প্রতি নতুন ও আধুনিক বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টিং মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। বিমান প্রেমে উন্নত ও মানসম্মত প্রকাশনা ও মুদ্রণ সামগ্রী তৈরিতে সক্ষমতা অর্জন করায় প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি সব গ্রাহক সহজে ও সাশ্রয়ী মূল্যে এখানে সর্বোত্তম সেবা পাবেন।