“নিজের লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না। খাদ্যে ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিন” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যবসা করছেন তারা দু’পয়সা বেশি আয়র জন্য খাদ্যে ভেজাল দেন বা পচা গন্ধ বাসি খাবার পরিবেশন করে থাকেন। এভাবে নিজেন লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি যারা এ কাজ করেছেন তাদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনায় এবার নড়েচড়ে বসেছেন বাগমারার ইউএনও শরিফ আহম্মেদ। তিনি এবার বাগমারা ব্যাপি ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে কঠোর অভিযানে নামার ঘোষনা দিয়েছেন। বুধবার বাগমারা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্ময় সভায় তিনি এই ঘোষনার কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি ইউএনও আরো বলেন, গোটা উপজেলাকে খাদ্যে ভেজাল মুক্ত করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন, এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সমাজের দায়িত্বশীলদের খাদ্যে ভেজাল রোধে সচেতন হওয়ার আহবান জানান ইউএনও।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বাগমারা উপজেলা মাসিক সমন্ময় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বাগমারা উপজেলা ব্যাপি বিভিন্ন এলাকায় সব ধরনের খাদ্যে ভোজল প্রতিরোধ, মান সম্পন্ন খাদ্য তৈরি ও বিক্রয় সহ ওজনে সঠিত মান এবং খাদ্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে সংরক্ষন ও খাদ্যে উৎপাদন ও বিক্রয়ের শেষ মেয়াদ প্রভৃতি যথাযত ভাবে প্রতিপালন করার বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তুলে ধরেন। ইউএনও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ ও নির্ভেজাল খাদ্য পরিবেশনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে সভায় উপস্থিত প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও উপস্থিত বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এই বিষয়গুলো উপজেলার সকল খাদ্য প্রস্তুতকারী ও বিভিন্ন দোকান মালিকদের মাঝে প্রচার করুন। যাতে সবাই সচেতন হতে পারে। তিনি সময় থাকতে সবাইকে সচেতন ভুমিকা রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করতে আমরা কাউকে ছাড় দিব না। আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করব। সভায় উপস্থিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান অনীল কুমার সরকার বলেন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বত্র নিরাপদ ও ভেজাল মুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাব।
এ দিকে সর্বত্র নিরাপদ ও ভেজাল মুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের ভুমিকাকে সাদুবাদ জানিয়েছেন ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সহ সচেতন মহল। তারা বলেন, করোনা কাল শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বাগমারায় খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে কোন অভিযান পারিচালন না হওয়ায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তারা পচা বাসি খাবার বিক্রি করেছ দেদারছে। স্থানীয় বাজারের ওষধ ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের দোকানে প্রতিদিন সকল ওষধের চাইতে গ্যাসের ওষধ বেশি বিক্রি হয়। সবাই পেটে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে আসেন। তারা জানান, বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় ও বিভিন্ন ফুটপাতের দোকানে ভেজাল ও পচা বাসি খাবার ও উন্মুক্ত স্থানে মাছি পড়া খাবার খেয়ে লোকজন পেটের সমস্যায় মারাত্বক ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা অবিলম্বে এসব অসাধু খাদ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রয়েছেন। তিনি বাগমারার বাসিন্দা হওয়ায় তিনি খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জোরালো কোন ভুমিকা রাখতে পারেন না। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন নিজ উপজেলায় চাকুরীর সুবাধে ভেজাল খাদ্য বিক্রেতাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলায় ওই সমস্ত ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারীরা ভয়ানক বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। ওই সকল জনপ্রতিনিধিরা অবিলম্বে বাগমারার মত একটি বিশাল এলাকার জন্য একজন দায়িত্বশীল স্যানিট্যারি ইন্সপেক্টর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, সকল প্রকার খাদ্য সহ যে কোন দ্রব্য ভেজালকারীদের প্রতি আমরা সতর্কতা বার্তা পাঠিয়েছি। তারা সংশোধন না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।