প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করি, বলি, ভাবি ও চিন্তা করি তাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আমীনের রহমত, কুদরত, দয়া ও উছিলা নিয়ে অনেকেই অনেক সময় ভাবিনা। একটু চিন্তা ও ভাবলে দেখা যাবে, আল্লাহর রহমত, কুদরত, দয়া ও উছিলা ব্যতিরেখে কিছুই হয় না। ইহাই বাস্তবতা। কোরআনে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। শাসন, প্রশাসন, রাজনীতি ও বিচার বিভাগে এমন কিছু নেই যা কোরআনে উল্লেখ নেই। এমনকি দৈনন্দিন, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধানও রয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে। তাই বলা হয়ে থাকে কোরআনই মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ও মানুষের ইহকাল ও পরকালের পথ নির্দেশক। যার বাইরে কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। আমাদের প্রিয় নবী, আল্লাহর হাবীব (দোস্ত) ও আখেরী জামানার নবী রাসূল (সাঃ) যে পথ দেখিয়ে গেছেন সবকিছুই জীবরাইল (আঃ) কর্তৃক আল্লাহর নির্দেশিত ওহী (বার্তা) ও আল্লাহর কোরআনের বাণীরই পথ নির্দেশক। দুনিয়ার কোনো ব্যক্তি, রাজা, বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিছুই বিন্দুবিসর্গ এর সমান নহে। আল্লাহ কোনো কিছু ইরাদা করলে বা ইচ্ছা পোষন করলে কূন বা হও বলার আগেই তা হয়ে যায়। চোখের পলকে বাদশাহকে ফকির ও ফকিরকে বাদশাহ করে থাকেন। চোখের পলকে পাহাড়, পবর্তকে সমুদ্র এবং সমুদ্রকে পাহাড় পর্বত বানিয়ে থাকেন। যার রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একদিন তিনি সমস্ত পৃথিবীকে ধ্বংস (কিয়ামত) করে দিবেন। মোদ্দা কথা আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন পারেন না এমন কিছু নেই। যা দুকথা লিখে তা বুঝানো বাস্তবিকই কঠিন ও অসাধ্য। তারপরও কিছু উপমা, উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত এ নিবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে অতি সংক্ষিপ্তভাবে তোলে ধরছি।
মুষ্টিমেয় কিছু সাহাবী নিয়ে বদরের যুদ্ধে বিধর্মীদের বিশাল বাহিনী ও আবরাহার বিশাল বাহিনীকে আল্লাহ রহমত, কুদরত ও গায়েবী সাহায্যে পরাজিত করেছিলেন। উল্লেখ রয়েছে ওরা আবরাহার বিশাল হস্তিবাহিনী আবাবিল পাখির কংকর নিক্ষেপে ধরাশায়ী হয়ে দিকবিদিগ ছুটে চলে। আবাবিল পাখির কংকর যেখানে পড়েছিল সেখানে রকেট লঞ্চারের গোলার মতো গর্তে পরিণত হয়। উল্লেখ রয়েছে, আবাবিল পাখির প্রতিটি কংকর ১ টনেরও বেশি (সাড়ে সাতাশ মনের ওপরে) ওজন ছিল। হযরত ইবরাহিম (আঃ) কে নমরূদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করলে সেই প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ড আল্লাহর রহমত ও কদুরতে পানি হয়ে যায়। অগ্নিকুন্ড ফুলের বিছানা হয়ে যায়। আল্লাহ রহমত ও কুদরতে নীলনদের পানি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলে মধ্যে রাস্তা হয়ে যায়। হযরত মূসা (আঃ) নীলনদের ওপর দিয়ে সাহাবাসহ পাড়ি দিলেও ফেরাউন (রামেসিস) ও তার দলবল নীলনদের দুভাগের পানির চাপে দলবলসহ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়ে থাকে। হযরত ইউনুছ (আঃ) কে মাছে গিলে ফেললে, তিনি মাছের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় সূরায়ে ইউনুছ অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লা আন্তা ছোবহানাকা ইন্নিকুন্তু মিনাজ জেয়ালিমিন পাঠ করাকালে মাছ তাঁহাকে আল্লাহর কুদরতে জীবন্ত অবস্থায় সমুদ্রের কূলে বমি করে দেয়। আয়াতুল কুরছি, সূরা ইয়াছিন, সূরা আর রহমান, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাছ, সূরা ইউনুছসহ পবিত্র কোরআনের অন্যান্য সূরা পাঠ করে মানুষ সীমাহীন কষ্ট, দুর্দশা ও মরণব্যাধি হতে রক্ষা, আরোগ্য ও আছান মুক্তির অসংখ্য নজির ও দৃষ্টান্ত রয়েছে। কোভিড- ১৯ ও করোনা মুক্তির জন্য সূরা ইউনুছ তাৎপর্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণিত। যার কোনো তুলনা নেই।
নমরুদের নাকে একটি মশা ঢুকলে প্রতাপশালী নমরুদ মশার কামড়ে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ে। উল্লেখ রয়েছে নমরূদ মশার কামড়ে মাথা থাবড়াতে থাবড়াতে ধরাশায়ী হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে। মরুভূমিতে শিশু হযরত ইসমাইল (আঃ) কে রেখে যখন মাতা বিবি হাজেরা সামান্য পানির জন্য সাফওয়া ও মারওয়া পাহাড়ে ছুটাছুটি করে এক ফুটা পানির জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যখন তাঁহার জন্য একফুটা পানি সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। তখন দেখেন, আল্লাহর রহমত ও কুদরতে শিশু হযরত ইসমাইল (আঃ) পায়ের নীচ থেকে অনবরত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা জমজম কূপ নামে পরিচিত। আজও কোনো বিজ্ঞানী এই জমজমের কূপের পানির উৎস আবিস্কার করতে পারেনি। এ কূপের পানি আজও প্রবাহমান। হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর কুদরতে অন্ধ মানুষের চোখে হাত স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে দেখতে পারত এবং মৃত মানুষের কবরে গিয়ে ডাক দিলে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে জীবিত বাহির হয়ে আসত।
মিরাজ শরীফে রাসূল (সাঃ) এর গমন থেকে গবেষণা ((Research) ) করে নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদের দেশে গমন করেছে। পবিত্র কোরআনই যার মূল বিজ্ঞান ও গবেষণার আঁধার। চাঁদের দেশে পৌঁছে নভোচারী নীল আমষ্ট্রং আল্লাহু আকবর ধ্বনি শুনতে পায়। পরবর্তী সময় তিনি মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটিতে সেই আযানের সমধুর ধ্বনি আল্লাহু আকবর ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। তারপর তিনি আল্লাহর মহিমা ও কুদরত নিয়ে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের ৯৯ নামের ফজিলত ও গুণবাচক নামের কুদরত সম্পর্কে ইসলামের প্রথিতযশা জ্ঞানী গুনী মনিষিগণের অনেকেই কোরআনের আলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। তদোপরি পবিত্র কোরআনে আল্লাহর ৯৯ নামের অজ¯্র ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। যার সাথে কারও কোনো তুলনা নেই।
সূরা আর রহমানে বার বার বলা হয়েছে ফাবি আইয়্যি আলা ইয়া রাব্বিকুমা তোকাযিবান। অর্থাৎ আমার কোন নিয়ামতকে তুমি অস্বীকার করবে। তুমি জান না, উত্তপ্ত মরুভূমির বালুকণা থেকে আমি মিষ্টি খেজুর খাওয়াই। অনেকে বলে মরে গেলেই তো শেষ। কিসের বিচার হবে (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ বলেছেন, অণু পরমাণু বীজ্য কণা থেকে আমি মায়ের গর্ভে মাংসপিন্ড সৃষ্টি করি। চোখ, কান, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, কিডনি, লিভারসহ অঙ্গ প্রতঙ্গ দান করি। মৃত্যুর পর আমি আবার তাদের জীবিত করতে পারব না তা কী করে অস্বীকার কর। একটি ছোট কলাপাতার ঘর বাঁধতে খুঁটির দরকার হয়। আর মাথার ওপর বিশালাকার আকাশ দন্ডায়মান থাকলেও ইহার খুঁটির প্রয়োজন হয় না। বিশাল পাহাড় ও পর্বত থাকলেও ইহার ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো হেলান দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
বিজ্ঞানের অনেক চমক নিয়ে অনেককে অনেক মন্তব্য করতে কম শোনা যায়নি। কিন্তু কোরআন শরীফ পাঠ করলে যে সুমধুর ধ্বনি শোনা যায় আজ পর্যন্ত এমন কোনো বই পুস্তক, গান, কবিতা পড়লে কোরআনের ধ্বনির মতো কোনো আওয়াজ শোনা যায় না। বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিস্কার করলেও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি গাছের পাতা ও একটি সরিষার দানা আদৌ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেনি। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার ফুটপাত থেকে সংগ্রহ করা একটি বই পড়েছিলাম। বইটির নাম ছিল “আফগানিস্তানের যুদ্ধে আমি আল্লাহকে দেখেছি”। বইটি পড়ে জানা যায়, আফগানিস্তানে যখন রাশিয়ার সৃষ্ট পুতুল সরকার বাবরাক কারমাল আফগান মুজাহিদদের ওপর গোলাবর্ষন করত এবং মুজাহিদরা যখন আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিতে থাকত তখন তাদের ওপর বিমান থেকে বোমাবর্ষন ও গোলাবর্ষন কার্যকর হত না। তাছাড়া বইটিতে আল্লাহর আরও গায়েবী সাহায্যের কথা উল্লেখ করা হয়। এমনিভাবে আল্লাহর রহমত, কুদরত ও দয়ার দিকদর্শনের কূলকিনারা পাওয়া বাস্তবিকই অসম্ভব। এ বয়সে কত বিপদ, আপদ, অসুখ বিসুখ থেকে যে মুক্তি পেয়েছি এ নিবন্ধে তা বর্ণনা করলে সংক্ষিপ্ত এ কলেবরে শেষ করার মতো নয় বিধায় অন্য একটি কলামে তা বিশদভাবে বর্ণনা করার প্রত্যাশা রাখি।
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে থাকে। এই যুদ্ধে কেমকারান সেক্টরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সৈনিকের কাছ থেকে জানা যায়, কেমকারান সেক্টরে এক সময় বহু ভারতীয় সৈন্য বন্দী হয়ে থাকে। তারা তখন বলে থাকে, এই যুদ্ধে হাজার, হাজার সৈন্যকে দেখা গেছে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর বলে সামনে এগিয়েছে। তদের ভয়ে সন্ত্রস্ত, আতংক ও ভীত হয়ে অস্ত্র ফেলে আমরা পেছনে হটে গিয়েছি। এর প্রসঙ্গে একজন মন্তব্য করে বলেছেন, এসবই আল্লাহর রহমত, কুদরত ও গায়েবী সাহায্য। এ ধরণের কুদরতী সাহায্য বদরের যুদ্ধসহ আরও অনেক যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর গায়েবী সাহায্যের (Unseen help) সীমা পরিসীমা নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় দানব, রাক্ষস হানাদার বাহিনী হাত পা বেঁধে বারবার গুলি করলেও কোনো অবস্থাতেই অনেকের ওপর গুলি লাগাতে পারেনি বলে উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে বেঁচে যাওয়া একজনের কাছ থেকে জানা যায়, বন্দী অবস্থায় সে সবসময় আল্লাহকে ডেকেছে। এমনকি গুলি করার আগ পর্যন্ত সে আয়াতুল কুরছি পাঠ করেছে।
মানুষের অভাব অভিযোগ ও দুশ্চিন্তা লাঘবে কোরআন হাদীসের আলোকে বেশ কিছু দিকদর্শনের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (ক) তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। তাকদিরের সারমর্ম উল্লেখ করে আল্লাহ বলেছেন আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা শ্রবনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ ও বাসনা রোধ করার কেউ নেই (সূরা ইউনুছ, আয়াত ১০৭)। (খ) দুনিয়ার বিপদ আপদের বিনিময়ে পরকালে মিলবে আল্লাহর অনুগ্রহ। পরকালের বিভীষিকার সামনে দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট কিছুই নয়। তাই সেদিকটা চিন্তা করে দুঃখ কষ্টে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে (সূরা নাজিয়াত, আয়ত ৪৬)। (গ) আপনার চেয়ে বেশী বিপদগ্রস্থ মানুষের কথা ভাবুন। হাদিসে এসেছে এক সাহাবি রাসূল (সাঃ) কাছে দুঃখ কষ্টের অভিযোগ করেন। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকদের এই অবস্থা ছিল যে, একজন মানুষকে ধরে আনা হতো এবং গর্ত খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হতো। তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দিখন্ড করে দেয়া হতো এবং মাংসের নীচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেয়া হতো। কিন্তু কঠোর ও নিষ্ঠুর পরীক্ষা তাকে তার ইসলাম থেকে আদৌ ফেরাতে পারত না (সহিহ বুখারি হাদিস ৩৬১৬)। (ঘ) আল্লাহর ব্যাপারে সুধারনা পোষন কর। তার ওপর ভরসা রাখ। তিনি নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর যে আল্লাহ ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট (সূরা তালাক, আয়াত- ৩)। (ঙ) দুশ্চিন্তা দূর করার নিয়তে নফল নামায পড়–ন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)। (চ) বেশী বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন (সুনানে আবু দাউদ হাদিস- ১৫২০)। (ছ) প্রিয় নবী (সাঃ) এর প্রতি অধিক হারে দরুদ পাঠ করুন। দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, উবাই ইবনে কাব (রাঃ) দরুদ পড়া প্রসঙ্গে নবীজীকে বললেন, আমি আমার সবটুকু সময়ে আপনার প্রতি দরুদ পড়ব। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তা মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গোনাহ মাফ করা হবে (সুনানে তিরমিজি হাদিস, ২৪৫৭)। (জ) দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য রাসূল (সাঃ) শেখানো দোয়াগুলি বেশি বেশি পড়–ন। দোয়ায়ে ইউনুছ লা ইলাহা ইন্না আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিজান জোয়ালিমিন। এই দোয়া পড়লে আল্লাহ বিপদ আপদ দূর করে দেন (সুনানে তিরমিজি হাদীস ৩৫০৫)।
পেরেশানির সময় রাসূল (সাঃ) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো আল্লাহুমা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজমি ওয়াল কামালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল। অর্থ হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে ঋণের ভার ও মানুষের দমনপীড়ন থেকে (সহিহ বুখারি হাদিস ২৮৯৩)।
কোরআন হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর নির্দেশিত বিধি বিধান ও দিকদর্শনে নীহিত রয়েছে জীবন ব্যবস্থাসহ সবকিছু সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান। আল্লাহ রাব্বুল আলআমীনের গায়েবী সাহায্য রহমত, কুদরত ও দয়া পেতে হলে সর্বোপরি প্রয়োজন আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা, ঈমান ও আখলাকের সাথে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। মনে প্রাণের বিশ্বাস স্থাপন করা হাসবুনাল্লাহু ওয়ানিমাল ওয়াকিল ও হাসবি আল্লাহু ওয়ানিমাল ওয়াকিল। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের জন্য এবং আমার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া আল্লাহর রহমত, কুদরত, দয়া, উছিলা ও গায়েবী সাহায্যের সীমা পরিসীমা নেই। আল্লাহ, রাসূল ও কোরআনের নির্দেশিত পথ অনুসরণই হোক আমাদের পাথেয়। আল্লাহ কোনো কিছু ইচ্ছা করলে কূন ফায়াকূন বলতে হয় না। কূন অর্থাৎ হও, হইয়া যাও, বলার আগেই তা হয়ে যায়।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন যাকে ইজ্জত, সম্মান দান করেন, কেহ তাহাকে বেইজ্জতি বা অসম্মান দান করতে পারেনি। আল্লাহ যাকে বেইজ্জতি ও অসম্মান করেন তাহাকে কেহ ইজ্জত দান করতে পারেনি। আল্লাহ চোখের পলকে বাদশাহকে ফকির ও ফকিরকে বাদশাহ করে থাকেন। পাহাড় পর্বতকে ইশরায় সমুদ্র ও সমুদ্রকে পাহাড় পর্বত বানিয়ে থাকেন। আল্লাহ বারবার বলেছেন, আমি যা জানি তুমি তা জান না। আল্লাহর নির্দেশিত পথই হোক আমাদের জীবন ও চলার উত্তম দিকদর্শন।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট