ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ দাবী করে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভায় আবারও উত্তপ্ত সরাইল। জেলা বিএনপি’র সদস্য, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহসভাপতি মো. আক্তার হোসেন ও সাবেক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সোমবার সকালে মাঠে নামে বিএনপি’র একাংশের নেতা কর্মীরা। ক্ষুদ্ধ হয়ে জেলার আহ্বায়ক জিল্লুর গলায় জুতার ছবি সম্বলিত ফেষ্টুন ব্যবহার করেছেন তারা। দিয়েছেন নানা অশালীন স্লোগানও। টাকার বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগও করেছেন বক্তারা। এ কমিটি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত দিয়েছেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আল্টিমেটাম। সকাল ১১ টায় শহিদ মিনার চত্বরে পথসভা চলাকালে পুলিশি বাঁধায় ভন্ডুল হয়ে যায়। দলীয় সূত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, সরাইলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্তির ২ মাস পর গত ২৬ ফেব্রƒয়ারি রাতে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। ওই কমিটিতে মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট নূরূজ্জামান লস্কর তপুকে করা হয় সদস্য সচিব। কমিটি প্রকাশের পরই ক্ষোভ বিরাজ করে বিএনপি’র একাংশে। প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ার হোসেন দেন পদত্যাগের ঘোষণা। আর সাবেক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন কমিটি গঠনে ূবিধি মানা হয়নি। গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন স্তরের দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকরা সরাইল সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ আনোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। সোয়া ১০টার দিকে সেখান থেকে আনোয়ার হোসেন ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির ৬ সদস্য, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সম্পাদক, বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএনপি’র নেতা কর্মীসহ ৫ শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করে। আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ দাবী করে জেলার আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানের বিরূদ্ধে নানা অশালীন স্লোগান দেয়। প্রধান সড়ক হয়ে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে পথ সভায় মিলিত হয়। একসময় কিছু লোক জুতা পায়েই শহিদ মিনারে বেদি ও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়ে। আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন- সদ্য সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মো. জহির উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি মো. আক্তার হোসেন, সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আজমল হোসেন ছোটন ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক আবদুল জব্বার। উপস্থিত ছিলেন-জেলা জিয়া পরিষদের সম্পাদক মোছা. শামীমা আক্তার, মো. মশিউর রহমান, এম কামাল হোসেন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল আলম খন্দকার মুন্না, সম্পাদক মো. জহিরূল ইসলাম ভূঁইয়া। বক্তারা বলেন, মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে দল ত্যাগী ও বহিস্কৃত নেতাদের দিয়ে করা কমিটি আমরা মানি না। মানব না। আওয়ামী এজেন্টদের এ কমিটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। জেলা কমিটির আহ্বায়ক জিল্লুর নিজের ইচ্ছামত আইন তৈরী করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে কমিটি করছেন। তিনি সরাইলের শান্ত বিএনপিকে অশান্ত করছেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ আনিছ ঠাকুর দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। আর তপু ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ফেব্রƒয়ারি পদত্যাগ ও ১৯ মার্চ দল করেছে বহিস্কার। তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে সরাইলে ওঠতে দেয়া হবে না। নাবালকদের দিয়ে গড়া অবৈধ এ কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নবগঠিত উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, দলীয় কিছু লোক আবেগে মিছিল করছেন। আমরা আগামীকাল (আজ) দলের সকলকে নিয়ে আনন্দ মিছিল করব। একসময় রাগ থাকবে না। সকলকে নিয়ে দলকে ঘুছিয়ে নিব। আমি দল থেকে নয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। পদত্যাগ পত্রটি জেলা কমিটি গ্রহন করেনি। জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমান অর্থসহ সকল অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, দলকে সংগঠিত করতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কথা বলে নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে ১৮৬ জন থেকে বাঁছাই করে ৩১ জনের কমিটি দিয়েছি। বড় দল। অনেকেই বাদ পড়েছেন। তারা ক্ষুদ্ধ হতেই পারেন। আনিছ ঠাকুরের পদত্যাগের কোন রেকর্ড নেই। আর তপুর বহিস্কারাদেশ কেন্দ্রীয় ভাবে উত্তোলন করা হয়েছে। টাকা লেনদেনের কথা বলে আমাকে সামাজিক ভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে। আমি কি ফকিন্নির পুত? এসব বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি। এই কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা ও মাঠে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে বাতিল করে দিব।