বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্প শেষ পর্যায়ে এসে অর্থের অভাবে আটকে রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে আরো একদফা ব্যয় বাড়বে। চলতি বছর এপ্রিলের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ না করা হলে চলতি অর্থবছরে সেটি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ বর্ষা মৌসুম শুরু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আরো একদফা ঝুলে যাবে। বর্তমানে অর্থ প্রাপ্তির ওপরই প্রকল্পটির শেষ মুহূর্তের কাজ নির্ভর করছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কাজ প্রায় এক যুগ ধরে চলছে। কিন্তু প্রকল্পটি অর্থ সঙ্কটের কবলে পড়ে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পটি অনেকের কাছেই উচ্চাভিলাষী; আবার কারো মতে বাস্তবমুখী। তবে সকলেরই প্রত্যাশা প্রকল্পটির কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হোক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১৬৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যমুনা নদীর পানি বুড়িগঙ্গায় আসবে। বাড়তি ফসল উৎপাদনসহ বহুমুখী সুবিধা সংবলিত এই প্রকল্পটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন অর্থনৈতিক জোগানের ওপর নির্ভর করছে। অতীতেও অর্থের অভাবে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। যার ফলে ২০০৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। এক যুগ আগে ওই প্রকল্পটির যেখানে ব্যয় ছিল ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তাগিদ থাকলেও অর্থের টানাপোড়েন রয়েছে। গত ১০ বছরে ভূমি অধিগ্রহণ, ভৌত কাজ, ড্রেজিং বাবদ ওই প্রকল্পের পেছনে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হলে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। কারণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিল না পাওয়ায় ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। তবে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বরাদ্দ মেলেনি। তাছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পর এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বছরে ৭২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। তা নাহলে এর সুফল পাওয়া যাবে না।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছর জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে হলে দ্রুততার সঙ্গে ১শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন। মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে এপ্রিল থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করবে। তখন কাজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটার উজানে আলীপুর ও বেলটিয়ার মাঝে নিউ ধলেশ্বরীর অফটেক মুখ। ওই মুখ কেটেই যমুনার পানি বুড়িগঙ্গায় আনা হবে। প্রকল্পের কাজে যথেষ্ট গতি রয়েছে। তিনটি স্থানে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। যমুনা থেকে নিউ ধলেশ্বরীর যে মুখটি কেটে পানি নেয়া হবে সেখানে কাজ করছে নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার। অফটেক মুখ থেকে তারা ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত কেটে সেডিমেন্ট বেসিন পর্যন্ত যাবে। ওই বেসিনে যমুনা নদী থেকে আসা পানি বালিমুক্ত করবে। ওই সেডিমেন্ট বেসিন, ইনটেক চ্যানেল ও সেডিমেন্ট বেসিনের বাইরে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ ঘনমিটার পলি জমা হবে। জমা হওয়া বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ এবং বিক্রি করা যাবে। ৪০০ মিটার চওড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার স্কয়ার মিটারের বেসিনটির নির্মাণ কাজও দ্রুততার সঙ্গেএগিয়ে চলছে। তারপর থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার খনন কাজ করছে যৌথভাবে এডিএল ও ডব্লিউইএল। আর ৬৭ থেকে ৮৭ দশমিক ৫ এর মাঝে সাড়ে ২০ কিলোমিটার খননের কাজ করছে বঙ্গ ড্রেজার লিমিটেড।
এদিকে প্রকল্পটির বিষয়ে সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার জানান, প্রকল্পটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। অর্থ সঙ্কটের কবলে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। অর্থের কোন সমস্যা হবে না। কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ অবশ্যই বরাদ্দ দেয়া হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এর সঙ্গে আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত। বুড়িগঙ্গাকে সচল করতেই যমুনার পানি কয়েকটি নদীর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় পানি আনার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প কাজ শেষ করা যাবে।