দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাষ্ট্রি ও কার্যক্রম বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের ন্যাশনাল রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রাম (এনআরপি)’র যৌথ উদ্যোগে এবং ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় দেশের ঐতিহাসিক পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিগত কয়েক বছর যাবৎ সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণ, অর্থনৈতিক প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ক গবেষণা “স্টাডি অন ইকনোমিক ইমপ্যাক্ট অব ওয়াটারলগিং অন লোকাল ট্রেডঃ দ্যা কেইস অব খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম” শীর্ষক সেমিনার ১৫ মার্চ সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা কমিশন’র কার্যক্রম বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আহসান হোসেন, সম্মানিত অতিথি এনআরপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার, ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম এনালিস্ট আরিফ আবদুল্লাহ খান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন (ইমন), খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ- ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, আমির মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া, রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন (মুহিম) বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ জহুরুল আলম, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও সাবেক পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। স্টাডি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এনআরপি’র কনসালটেন্ট ড. রিয়াজ আক্তার মল্লিক, ড. নজরুল ইসলাম, ড. আবু তৈয়ব মোঃ শাহজাহান ও সুমাইয়া মামুন।
প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী চাকতাই-খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, চিটাগাং চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে এক সাথে কাজ করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে চাকতাই-বদরখালীসহ বিভিন্ন খাল দখলমুক্ত করা, পলিথিন’র ব্যবহার বন্ধ করা, ময়লা আবর্জনা/বর্জ্য ফেলে খাল ভরাট প্রতিরোধ করা এবং কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কাজ নিয়মিত তদারকি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি চট্টগ্রাম শহরের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বহির্বিশ্বে পরিচিতির লক্ষ্যে একটি লোগো তৈরির ঘোষণা দেন। চাকতাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় কমিউনিটি হল নির্মাণ, ট্রাক চালকের বিশ্রামের জন্য ডরমিটরী, সাধারণ শ্রমিকদের জন্য গণশৌচাগার ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এই এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে বিশেষ জোন হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-শত শত বছর ধরে চাকতাই খালের মাধ্যমে নৌ-পথে বাণিজ্য পরিচালনায় খাতুনগঞ্জ-কোরবানীগঞ্জ-চাকতাই এলাকার গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। ৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে ক্রমান্বয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও অতি বৃষ্টির ফলে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার সাথে খাল, নালা-নর্দমা ভরাটের ফলে বিভিন্ন গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে পরিকল্পনা কমিশনের এনআরপি প্রকল্প ও ইউএনডিপির উদ্যোগে পরিচালিত এই সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প গ্রহণ করে একনেকে পাশ করার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
¬¬¬
বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা কমিশন’র কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন-দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগের তিন গুণ যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে থাকে। সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত এই কারিগরি প্রকল্প বেসরকারি বিনিয়োগে সহায়ক হবে। তিনি বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের চূড়ান্ত উপসংহারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার অনুরোধ করেন।
এনআরপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার বলেন-ছোট্ট পরিসরে পরিচালিত এই সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্টে স্টেকহোল্ডাদের মতামত গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভূক্ত করে তা প্রকাশ করা হবে। ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম এনালিস্ট আরিফ আবদুল্লাহ খান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর সলিড ও লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ- ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যানে খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন দিক নির্দেশনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন এবং এই অঞ্চলকে বাণিজ্যিক জোন করার বিষয় বিবেচনার প্রস্তাব করেন।
অন্যান্য বক্তারা সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি গ্রহণ এবং নির্মাণাধীন স্লুইচ গেইটসমূহ অতি দ্রুত সম্পন্ন করা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সমন্বিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ, খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে ও স্থায়ীভাবে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালে নর্দমায় বর্জ্য ফেলা প্রতিহত করা এবং পলি অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
নং-আই/আইএনডি/৩৩/১৬১ ১৫ মার্চ ২০২১ ইং
সকল স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, সংবাদ সংস্থাসমূহ, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহে সম্প্রচার/প্রকাশের লক্ষ্যে সবিনয় অনুরোধপূর্বক প্রেরণ করা গেল