দিঘলিয়া উপজেলার গণ মানুষের স্বপ্নের ভৈরব সেতু বাস্তবায়নের কাজ ২৪ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ভৈরব সেতুর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা গত তিন মাসেও ডিসি অফিসের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠাতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর, কেডিএ এবং আরবান ডেভলপমেন্ট- এর ছাড়পত্রের। এ ছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন’ এখনও হাতে পায়নি ভৈরব সেতু এলাইনমেন্ট ও এপ্রোচ রোডের লে-আউট। সওজ সূত্র বার বার বলছে, সব কিছুই আন্ডার প্রসেসিং- এর কথা। এদিকে নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলছে বিভিন্ন মহল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতু প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন পায়। সওজের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ২০২০ সালের ২৭ জুলাই ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। একই বছর ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি উপর্যুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর তাঁরা কার্যাদেশ পায়। সেতুটি হবে নগরীর রেলিগেট থেকে দিঘলিয়ার নগরঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত। এ ছাড়া সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ ঘটাতে ফেরিঘাট থেকে নগরীর মহসিন মোড় এবং দিঘলিয়ার নগরঘাট থেকে উপজেলার মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার (ভায়াডাক্ট) নির্মাণ করা হবে। ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩১৬ কিঃ মিঃ এবং প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত প্যাকেজ সংখ্যা ৩ টি। এর মধ্যে পিসি গার্ডার সেতু ১২১৬.৯৬ মিটার। স্টীল সেতু ১০০ মিটার। এপ্রোচ সড়ক ১.০৬৫ কিঃ মিঃ। নতুন সড়ক ২.০০ কিঃ মিঃ এবং সড়ক বিভাজক ৩৭৬০ মিটার। যার ইন্টার সেকশন হবে ২ টি।
সেতু নির্মাণ এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হবে সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে। ভৈরব সেতুর জন্য নদীর উভয় পাশে সর্বমোট ২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভৈরব নদীতে পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মধ্যে নদীর ভেতরে ১৫, ১৬ ও ১৭ নং পিলার বসবে। ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পশ্চিম পাশে অর্থাৎ নগরীর মহসিন মোড় থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট পর্যন্ত। ১৮ থেকে ৩০ নং পিলার বসবে দিঘলিয়ার নগরঘাট ফেরিঘাট থেকে উপজেলার মোড় সংলগ্ন কুকুরমারা মোড় পর্যন্ত।
ভৈরব সেতুতে পাইল হবে মোট ৩০৮ টি। গার্ডার হবে ১৪০ টি। মূল সেতুতে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য একটি স্টিলের স্পান বসবে। এবাটমেন্ট হবে ২ টি। ব্রীজের উভয় পাশে ড্রেনের কাজ হবে মোট ৪০০ মিটার। কালভার্ট হবে ২টি। ব্রীজের উপর ওঠার জন্য নগরীর মহসীন মোড়ে একটি ইন্টার সেকশন (জাংশন) হবে।
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভৈরব ব্রীজের কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশে ২৪ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া-গাজীরহাট তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় ৩ মাস পার হয়ে গেলেও ভৈরব ব্রীজের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নবনিযুক্ত প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ভৈরব ব্রীজের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করে রেখেছি কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্রীজের এলাইনমেন্ট, জায়গার লে আউট, জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, পরিবেশ অধিদপ্তর, কেডিএ এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট -এর ছাড়পত্র না পাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে
বিলম্ভ হচ্ছে। আর এ জটিলতা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।আর এ জটিলতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, এখনও আমরা অফিসিয়ালভাবে নিশ্চিত নই, কোন জায়গার উপর দিয়ে ব্রীজের পিলারগুলো বসবে। তিনি আরো বলেন, তারপরও আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে ২৫ নং পিলারের কাজ চলবে। যেটি বসবে দেয়াড়া ঈদগাহের মধ্যে। টেষ্ট পাইলিং এর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) শাহনাজ পারভীন এ প্রতিবেদককে বলেন, “খুলনা সওজের কাছ থেকে এখনও আমরা ভৈরব সেতুর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা পায়নি। প্রস্তাবনা পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
কার্যাদেশের প্রায় ৩ মাস পার হলেও সওজ ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা খুলনা এডিসি ( এল এ) শাখায় দাখিল করতে পারে নি। এ ব্যাপারে সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ভৈরব ব্রীজের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সকল প্রক্রিয়া চলমান আছে। সপ্তাহ দুই আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, কেডিএ এবং আরবান ডেভলেপমেন্টকে চিঠি দিয়েছি ছাড়পত্রের জন্য। ইতোমধ্যে তারা সাইড পরিদর্শন করেছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার এ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা ওই ৩ টি সংস্থার সংগে বৈঠক করেছি। আশা করি দ্রুতই আমরা তাদের ছাড়পত্র পেয়ে যাবো।
এদিকে ভৈরব ব্রীজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন’ কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রীজের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। অথচ সরেজমিনে দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে তাদের অফিস বেজক্যাম্প-স্টক ইয়ার্ড তৈরী করে টিন দিয়ে সীমানা প্রাচীর করেছে, সেখানে কাজ শুরুর কোন ইকুইপমেন্ট দেখা যায়নি।