প্রতি বছর রমজান এলে এ দেশের অসৎ ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে সবচেয়ে বিপদে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে তারা টিসিবির গাড়িতে লাইন ধরে, যেখানে টিসিবি খোলাবাজারে অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য বিক্রি করে। কেবল নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্তরাও লজ্জা ভেঙে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। খোদ টিসিবিই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দুই দফায় সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রমজানের আগেই সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার ১০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র দাবি করেছেন, দাম বাড়ানো নয় বরং নিত্যপণ্যের চলমান বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারের পণ্যের দামের সঙ্গে টিসিবির পণ্যের দামে সমন্বয় না করলে কারসাজির আশঙ্কা থেকে যায়। সেই আশঙ্কা থেকে বাজারে পণ্যের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে বলে দাবি মুখপাত্রের। গতকাল থেকে তেল লিটার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি, মসুর ডাল ৫ টাকা এবং পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে টিসিবি। সংস্থাটি ছোলার কেজি ৫৫ টাকা এবং খেজুর ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার তো বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিচ্ছে। তবে গরিব মানুষের কথা বিবেচনা করে টিসিবিই পণ্যের দাম না বাড়ালেই ভালো হতো। এমনিতেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। একদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অন্যদিকে আসন্ন রমজান। দীর্ঘদিন থেকেই চাল, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বৃদ্ধি। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে আরো বাড়বে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বিশেষ করে পহেলা রমজানে বাজারে আগুন থাকে। আমরা মনে করি, দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা রমজান মানে না, করোনাভাইরাস কালেও জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজারসন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রুত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। অতিলোভী মানসিকতার কারণেই দেশের সাধারণ জনগণ তাদের কাছে জিম্মি। অবাক ব্যাপার যে, বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সরবরাহ সংকট নেই, তারপরেও হুহু করে দাম বাড়ছে। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই হতাশাজনক চিত্র। সরকারের উচিত এই দুর্যোগকালে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। দেশব্যাপী করোনার ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনে সময় আরো কঠিন হতে পারে এই কথা মাথায় রেখে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা টিসিবির পণ্যমূল্য তালিকা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।