পবিত্র মাহে রমজান দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ধর্মীয় এ আচারকে সামনে রেখে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতি বছরই বাড়ে। সরকার যথারীতি বাজার নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করে নিত্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে বারবার বক্তব্য দিলেও জনগনকে বাড়তি দাম পরিশোধ করে নিত্য পণ্য কিনতে হয়। বেসরকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারনে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, পথে পথে চাঁদাবাজী, ব্যাংক ঋনের ধীর গতি সহ নানা সমস্যার কথা বলেন। সরকার সব সময়ই বলে থাকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সব কিছু নিয়ন্ত্রনে তার সচেষ্ট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র মাধ্যমে নিত্য পণ্য যথাযথ দামে জনগনের কাছে পৌছে দেয়া হবে এমন ঘোষণা এবারো আছে। তবে এবার টিসিবিও দাম বাড়িয়েছে তাদের পণ্যের। গত ১ এপ্রিল তারা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়েছে। বিক্রি করছে একশত টাকা লিটার। আর প্রতি কেজি চিনিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে বাড়াতে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। গত ১৫ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায়। বর্তমানে ১৩৯ টাকা দরে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে ৪ টাকা বেশি।
বাজারে চালের দামও বাড়তির দিকে। যদিও ব্যবসায়ীরা চাল আমদানীর অনুমতি পেয়েছেন। সরু নাজির শাইল ও মিনিকেট চাল মান ভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি বিআর ২৮ জাতের চাল ও কিনতে হচ্ছে ৫২-৫০ টাকা কেজিতে। মোটা চালের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। যা ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। টিসিবির হিসেব মতে বাজারে এক মাস আগের তুলনায় দেশি পিঁয়াজের দাম ২২ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৬৬ শতাংশ বেশি। সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল এদাম আরো বেশি। নতুন পিঁয়াজ ওঠায় দাম কমেছে, বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এদিকে মাছ, মাংসের দামও বেড়েছে। বেড়েছে তরিতরকারির দামও। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালিকা জাতের মুরগি ৩৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকা। বাদ নেই তরল দুধ ও গুড়ো দুধের দামও। মিল্ক ভিটা তরল দুধ এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ৭০ টাকা। আর গুড়ো দুধের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৯০ টাকায়। বাদ জায়নি আঠা, সুকনো মরিচ, ছোলা বুট সহ অন্যান্য নিত্য পণ্যের দাম বাড়া।
নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগনের ক্রয় ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যারা বাজার থেকে নিত্য পণ্য কিনতেন, তারা এখন টিসিবির ট্রাক থেকে লাইন দিয়ে পন্য কিনছেন। সেই টিসিবিও যখন নিত্য পণ্যের দাম বাড়ায়, তখন জনগন হতাশ হয়ে পড়ে। ১ এপ্রিল টিসিবি ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বাড়ানোর পর বাণিজ্য মন্ত্রী সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারনে নিত্য পণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু যারা প্রতিদিন বাজার থেকে নিত্য পন্য কেনেন, তারা বলছেন এটা মন্ত্রীর জনগনকে নিয়ে রসিকতা ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে আবারো লক ডাউনে বাংলাদেশ। ফলে গণপরিবহন, যাত্রীবাহি ট্রেন ও নৌযানসহ অভ্যান্তরিন রুটের বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ফলে ৩ এপ্রিল লক ডাউন ঘোষণার সাথে সাথে কিছুটা সমার্থবানরা নিত্য পণ্য কেনার জন্য বাজারে ও দোকানে ভিড় করেন। যদিও লক ডাউনের ঘোষনায় বলা হয়েছে জরুরি সেবা ও গনমাধ্যম, নিত্য পন্যের দোকান, পন্যবাহী যানবাহন ও শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। তথাপি মানুষ আতংঙ্কিত হয়ে বাজারে ও দোকানে ভিড় করছে এবং কিছুটা বেশি দামে নিত্য পণ্য কিনছেন। সুযোগ সন্দানী ব্যবসায়ীরা সব সময় টুপাইস কামাই করার ধান্ধায় থাকেন এবং সুযোগের সদব্যবহার করেন।
গত বছরের লক ডাউনের অভিজ্ঞতায় এবারের লকডাউন মোকাবেলা কি হবে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তার বাইরে আমরা বলতে চাই দরিদ্র ও দিন মজুর মানুষের আহার আসবে কি করে আর জমি থেকে ফসল তুলে অল্প দামে ফড়িয়ারা ফসল নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করবে। এ অরাজকতা কি করে রুখবেন সরকার? করোনা সবাইকে পথে বসিয়ে ছাড়বে। লক ডাউন দীর্ঘায়িত হলে বিপদ সবার বাজারে নিত্য পণ্যের দামের আগুনের উত্তাপে পুড়বে জনগনের হাত। আর খাবার অভাব হলে কি জনগনকে ঘরে বন্দি করে রাখা যাবে। প্রয়োজনের জন্যই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। এর মধ্যে মহাপূন্যের মাস রমজান এসে যাবে এবং নিত্য পন্যের লাগামহীন দাম জনগনকে কষ্ট দেবে।
ধর্মীয় উৎসব নিয়ে সারা বিশে^ই বাজারে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সম্ভবত: বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে উৎসব পার্বনে নিত্যপন্য সহ অন্যান্য পন্যের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে যায়। তবে আমরা বিশ^াস করি, সরকার আন্তরিক হলে ব্যবসায়ীদের এ অশুভ উদ্যোগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন হাতের থাবায় সরকার ব্যর্থ হয়, আর জনগন অতিকষ্টে কাঠের পয়সা খরচ করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করেন।