দেশের ইতিহাসে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ এপ্রিল। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দেশে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা মাত্র ৬টি থেকে বেড়ে ৩১টি হয়ে গেছে। সমীকরণে দেখা যায়, দেশের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলাকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এই জেলায় গত দুই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে এই জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে ঢাকা জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে সিলেট জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। শনাক্ত হার বিবেচনায় সিলেট জেলাকে বিবেচনা করা হচ্ছে পঞ্চম উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নরসিংদি জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে খুলনা জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নারায়নগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে রাজবাড়ী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে ফেনী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নোয়াখালী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে চাঁদপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে শরীয়তপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে কুমিল্লা জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে বরিশাল জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে বগুড়া জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নড়াইল জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নীলফামারী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে গাজীপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে ফরিদপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে যশোর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে মাদারীপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নওগাঁ জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে রংপুর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে কিশোরগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে নাটোর জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে টাঙ্গাইল জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়াও কক্সবাজারে ১০ শতাংশের উপরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় এই জেলাকেও মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উপরোক্ত সমীকরণ বলে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে আছে? ২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে। মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ১৫৫ জনে। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ জন। ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি এক লাখ ৫৭ হাজার ১৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৭ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৫১ জন।
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধসহ রাত ১০টার পর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতেও বলা হয়েছে। সোমবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু এখনও অনেকাংশে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জনমনে করোনার কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্দেশনাগুলো হলো ১. সকল ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/ অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিযয়ে / জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ২. মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ৩. পর্যটন/বিনোদনকেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে। ৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। ৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে। ৬. বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ৭. নিত্যপ্রয়য়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ৯. শপিংমলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়রই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। ১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৩. করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়াারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস; প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। অন্তসত্ত্বা/অসুস্থ/বয়স পঞ্চান্নোর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৬. স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যে কোন ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ বিরত করতে হবে; ১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা কখনও ক্ষতি করে না। সঙ্কটের সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে ও আশেপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায়। সেই কারণেই শীতের করোনা প্রভাব ফেলেনি বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পাশাপাশি সেই নির্দেশনাগুলো মনে রাখতে হবে নিজের সুরক্ষার জন্য। পৃথিবীতে যত বিখ্যাত মানুষ ছিলেন সকলেই দায়িত্বশীল ছিলেন। দায়িত্বশীলতার গুণে তারা আলোকিত। যেকোন বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা সর্তকতা ও পূর্ব প্রস্তুতি বিপর্যয় কমিয়ে দেয়। সেই আলোকে বাংলাদেশ করোনার সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করবে বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ যেখানে বিশ্বের ৩৬টি দেশ এখনও টিকা পায় নি সেখানে বাংলাদেশে করোনার টিকা নিয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। তারপরও আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাস্তবায়নকারী সকলকেই অর্থ্যাৎ জনগণের সাথে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে। কারণ সরকারের একার পক্ষে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। করোনা নিয়ন্ত্রণ সরকারের একার দায়িত্বও নয়। কথায় বলে, শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় একটাই, আর তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা খুব বেশি জরুরি এবং সেটা অবশ্যই সঠিক নিয়মে হতে হবে । নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন, বাস্তবায়নে বাধ্য করুন। করোনামুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হোন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট