হেফাজতে ইসলামির যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মমিনুল হকের নারী কেলেংকারীর বিতর্কের মাঝে দেশে করোনার আক্রান্ত বাড়ার মাঝে বাংলাদেশে ৫ এপ্রিল থেকে ১ সপ্তাহের জন্য ২য় দফা লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে জনগণ লকডাউন মানছে না, উপেক্ষা করছে সরকারি ১৮ দফা নিয়মনীতি। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান বন্ধ থাকলেও রাস্তায় প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। যানযট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে হিমসিম থেকে হচ্ছে। এ অবস্থার মাঝে ৭ এপ্রিল থেকে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক আসনে যাত্রী বসিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বাস চালকরা তা মানছেন না। যাত্রীরা তাদের প্রয়োজনেই সব নিয়মনীতি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাসে উঠছেন, যাচ্ছেন গন্তব্যে। পথে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তা দেখেও না দেখার ভান করছেন। কখনো কখনো তারাই বাস থামিয়ে তাদের পরিচিত জনদের গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। অথচ ১৮ দফার নির্দেশনায় ১ম দফাটিই ছিলো গণপরিবহন বন্ধ রাখা। সরকারী নির্দেশনায় সেই গণপরিবহন আবার চালু করা হলো।
সরকারী সিদ্ধান্তে অফিস আদালত খোলা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে সরকারী ও বেসরকারী অফিসগুলো তাদের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিজস্ব পরিবহন দিয়ে সীমিত পরিসরে আনা-নেওয়া করবে। কিন্তু চরম বাস্তবতা হচ্ছে, সসরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোর এখন পর্যন্ত পরিবহনে সে ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই পথচারীদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যতই জরিমানা বা গণসচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করুক না কেন মানুষের পথ চলা বন্ধ করতে পারছে না। কলকারখানাগুলো খোলা রাখা হয়েছে কিন্তু তাদের যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওদিকে পথপথে নানা বিড়ম্বনা থাকলেও বইমেলা খোলা রাখা হয়েছে। এই দূর্যোগের মাঝে কারা বইমেলায় যাবেন তা নিয়ে কোনো চিন্তাবকরা হয়নি।
লকডাউনের আগের দিন ঈদের ছুটির মতো মানুষের ঢাকা ছাড়ার ¯্রােত লক্ষ্য কঅরে গেছে। ৫ আগস্ট আরিচা-পাটুরিয়া নগরবাড়ি ফেরি বন্ধ রাখার কথা থাকলেও যাত্রী ও যানবাহনের চাপে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল করেছে। ওদিকে বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ও শপিং মল সকাল-সন্ধ্যা খোলা রাখার দাবিতে এই লকডাউনের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করছে। তারা বলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখা দরকার। তারা রমজানে ব্যবসা করতে না পারলে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। পাড়া-মহল্লার দোকানপাট খোলা থাকলেও কাঁচা বাজারের জন্য খোলা মাঠে ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে রাউন্ড তৈরি করে মডেল মার্কেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এ ব্যাপারে তৎপর।
লকডাউন শুরু হবার পর সন্ধ্যায় ফরিদপুর সালদা উপজেলা সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে বাজার বন্ধ করার সময় এক ব্যক্তিকে লাঠি পেটা করায় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ প্রকাশ করে। আর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়। একজন মারা যান। দুইজন গুলিবিদ্ধ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ও ইউএনও অফিস ঘেরাও করেছে। জ¦ালিয়ে দিয়েছে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের গাড়ি, ভাংচুর করেছে সরকারী স্থাপনা। অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনার জন্য ওই এলাকার পুরুষরা ঘর ছাড়া। ব্যাপক হারে ধরপাকর শুরু হবার আশংকায়। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জরিমানা বা জেল দেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অধিকার আইনত নেই। কিন্তু মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে এখন প্রশাসন এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজছে এবং সরকারী কাজে বাধাদানের জন্য আইনের শিকল পড়াতে চাচ্ছে এলাকার মানুষদের। পর্যবেক্ষণ মহল বলছে, এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৭দিনের চলমান এই লকডাউন শেষ হলে আবারও লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে। যদিও মন্ত্রী পরিষদ সচিত বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে, এবার রমজানে মসজিদে মসজিদে ইফতারি ও সেহেরি করা যাবে না। বাসা থেকে অজু করে মসজিদে যেতে হবে। মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নিজে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হবে।
এদিকে লকডাউনের পর থেকে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়ছে। তারপরও জনগণ সচেতন নয়। তারা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছে। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠাই নাই ঠাই নাই অবস্থা। রোগীদের বিছানা সংকট যেমন রয়েছে যেমন সংকট রয়েছে আইসিইউর। এমন অবস্থার মাঝে যদি প্রত্যেকে নিজেদের ব্যাপারে সচেতন না হন তবে সরকারি যতই কড়াকড়ি করুক অবস্থার পরিবর্তন হবে না। যদিও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন পথে জনসচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছেন, মাস্ক বিতরণ করছেন। আমরা মনে করি জনগণ সচেতন হবেন নিজেদের জীবন রক্ষার্থে।